বীমা সুবিধা পেতে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা

বীমা সুবিধার আওতায় আসছেন পোশাক শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর। এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে সরকার। যার ফলে পোশাক খাতের সব শ্রমিক পর্যায়ক্রমে বীমা সুবিধার আওতায় আসবেন। এ লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় লাখ শ্রমিককে বীমা সুবিধা দিতে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের শীর্ষ খাত পোশাক রফতানি খাত। দেশের রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর এ রফতানি আয়ের অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক। এর মধ্যে নারী কর্মীই বেশি। যাদের ৪৩ ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক বছরে নানা অসুখে ভোগেন। কিন্তু মোট শ্রমিকদের মাত্র ১ ভাগ আছেন স্বাস্থ্য বীমার আওতায়। বাকি ৯৯ ভাগই স্বাস্থ্য বীমার সুযোগ পাচ্ছেন না। শতকরা ৪০ জন শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধায় আছেন মাত্র ৩৫টি কারখানার ৫৮ হাজার ২৬১ জন শ্রমিক।

তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান সম্ভাবনাময় এক খাত। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের, বিশেষত নারীদের কর্মসংস্থানের বিশাল এক বাজার। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছরে শতকরা ৪৩ ভাগ শ্রমিক বিভিন্ন অসুখে ভুগে থাকেন। অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে গড়ে ৪ দিনের বেতন তাদের হারাতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে এক লাখ ৫০ হাজার শ্রমিককে বীমা সুবিধার আওতায় আনা হবে। তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি এ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হলে সব পোশাক কারখানায় এটি চালু হবে।

আইএলও ও সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, পোশাক শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনতে সরকারের সঙ্গে শিগগিরই একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার ক্ষেত্রে এ বীমা ব্যবস্থা থেকে তাদের কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করা।

সূত্র জানায়, এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইআই) নামে চালু হওয়া বীমার প্রাথমিক অর্থ ব্র্যান্ড ও বায়ারদের কাছ থেকে আসবে। পুরোদমে চালুর পর এটির দায়িত্ব কারখানা মালিকদের নিতে হবে।

আইএলও সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত বীমা সুবিধাটা কি এবং এটা করলে এর উপকারিতা নিয়ে ক্রেতা, মালিক, শ্রমিক ও সরকারসহ সকল মহলের পরামর্শ বা সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। যা চলমান রয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, শ্রমিকদের বীমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে ব্যয় হবে রফতানির শূন্য দশমিক ০১৯ শতাংশ বা প্রতি ১০০ টাকায় প্রায় দুই পয়সা। আর দেশে বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা রফতানি মূল্যের ওপর শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ হারে সরকারের কেন্দ্রীয় তহবিলে টাকা জমা দিচ্ছেন। দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দুই লাখ এবং কর্মহীন হওয়ার মতো আহত হলে আড়াই লাখ টাকা পান। বর্তমান বাস্তবতা ও আইএলও এর মানদণ্ড অনুযায়ী এ টাকা খুবই অপ্রতুল।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রমিকদের বীমা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি ইস্যু। বীমা স্কিমের এ উদ্যোগে ব্র্যান্ড ও বায়ারদেরও অংশগ্রহণের অনুরোধ আমাদের। একই মনোভাব শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদেরও।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও দীর্ঘদিন ধরে ‘তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা’ নামক পাইলট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। যেগুলোর অধিকাংশের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে। তাই তৈরি পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে বড় পরিসরে তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য এসএনভি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের একটি দল গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

অর্থসূচক/এএ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.