ভিসি কলিমউল্লাহকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ। উপাচার্য নিজের দুর্নীতি ঢাকতে শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

আজ বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি এক হাজার ৩৫৬ দিনের মধ্যে এক হাজার ১১৯ দিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। অথচ তার নিয়োগ শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান নির্বাহী হিসেবে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকতে হবে। অথচ উপাচার্য ঢাকায় বসে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০-২২ ঘণ্টা কাজ করেন বলে মিথ্যাচার করেছেন।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হয়েও অনুপস্থিতি থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছামতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদ দখল করা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন, অনুমোদিত ও অনিয়মতান্ত্রিক ফাউন্ডেশন ট্রেনিং, ঢাকাস্থ লিয়াজো অফিসে অতিরিক্ত খরচ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, চরম শিক্ষক সংকটসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গ উপাচার্য কলিমউল্লাহ সরাসরি জড়িত।

তিনি আরও বলেন, উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। স্পিকারসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্তাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। এমনকি ইউজিসি বিষয়েও বাজে মন্তব্য করেছেন। সরকারের উন্নয়নসহ সব বিষয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। এজন্য আমরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। মিথ্যাচারের জন্য তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগগুলো তাকে প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে ক্যাম্পাসে তাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি এইচ এম তরিকুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফসহ পরিষদের অন্য সদস্যরা।

এর আগে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, আমি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ষড়যন্ত্রের শিকার, রাজনীতির শিকার।

সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান, শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার প্রতিবাদে রংপুরে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। ক্যাম্পাসে না এসে ঢাকায় বসে মিথ্যাচার করায় জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে আহ্বান জানান সংগঠনের নেতারা।

প্রসঙ্গত, নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ১০তলা ভবন ও একটি স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজে উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির আরেকটি সরেজমিন তদন্ত কমিটি। এর জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.