মোদির নামে বড় স্টেডিয়ামের বড় বিতর্ক

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হলো ভারতে। বুধবার গুজরাটের আমদাবাদের অদূরে নতুন স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। এক লাখ ৩২ হাজার আসন বিশিষ্ট ওই স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। বিতর্ক আরো বেড়েছে স্টেডিয়ামের দুইটি প্যাভেলিয়ন এন্ডের নাম নিয়েও।

আমদাবাদের অদূরে মোতেরা স্টেডিয়াম অনেক দিন ধরেই ছিল। এতদিন সেই স্টেডিয়ামের নাম ছিল ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলের নামে। বছরকয়েক আগে সেই স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ শুরু হয়। গুজরাট সরকার এবং গুজরাটের ক্রিকেট বোর্ডের তরফে জানানো হয়, বিশ্বের সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম তৈরি হবে সেখানে। বুধবার তার উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের সময় জানা যায়, স্টেডিয়ামের নাম বদলে নরেন্দ্র মোদি করা হয়েছে। তবে স্টেডিয়াম ঘিরে যে স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি হয়েছে, তা বল্লভভাই প্যাটেলের নামেই আছে।

ভারতে নেতা-মন্ত্রীদের নামে স্টেডিয়াম বা প্রকল্প নতুন কিছু নয়। তবে ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে কিছু করেননি বলেই ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য। সকলেরই কর্মজীবনের পরে অথবা মৃত্যুর পরে নামাঙ্কিত প্রকল্প অথবা সৌধ তৈরি হয়েছে। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে বহু রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীত্ব চলাকালীন তাঁর নামে স্টেডিয়াম নির্মাণ সম্ভবত এই প্রথম ঘটনা।

স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি বিরোধী দলগুলো রাজনৈতিক সুযোগ ছাড়েনি। তারা বলতে শুরু করেছে, বল্লভভাইয়ের নাম সরিয়ে মোদির নামে স্টেডিয়াম তৈরি করে বিজেপি বুঝিয়ে দিল, তারা দেশের ইতিহাসকে সম্মান করে না। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর লিখেছেন, ‘বল্লভভাই প্যাটেল বিজেপির মূল সংগঠন আরএসএসকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। বিজেপি এতদিন পরে তার প্রতিশোধ নিল।’

বিজেপির অবশ্য বক্তব্য, কোনোভাবেই বল্লভভাইকে অসম্মান করা হয়নি। গোটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সটির নাম তাঁর নামে। কেবলমাত্র স্টেডিয়ামটির নাম মোদির নামে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন গুজরাটের খেলাধুলোর বিষয়ে মোদি অনেক কাজ করেছিলেন। সেই সম্মানেই স্টেডিয়ামের নাম তাঁর নামে রাখা হয়েছে।

বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামের একটি প্যাভেলিয়ান এন্ডের নাম আদানি এবং অন্যটি আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্সের নামে। আদানি এবং আম্বানির সঙ্গে মোদির এবং বিজেপির সম্পর্ক সুবিদিত। বিরোধীরা সবসময়ই অভিযোগ করেন, এই দুই গুজরাটে শিল্পপতিকে মোদি বহু সুবিধা পাইয়ে দেন। তাঁরাও বিজেপিকে বিপুল অর্থ সাহায্য করেন। বস্তুত, মোদির আমলে বিশেষত আদানির ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

কিছুদিন আগেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, দেশ এখন ‘হাম দো হামারা দো’ নীতিতে চলছে। অর্থাৎ, মোদি-শাহ এবং আদানি-আম্বানি। বুধবার স্টেডিয়াম উদ্বোধনের পরে তিনি টুইটে লেখেন, তিনি যা বলেছিলেন, বাস্তবে তা-ই ঘটল। বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণও একই ধরনের টুইট করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে কেন দুইটি প্যাভেলিয়ান দুই বর্তমান শিল্পপতির নামে রাখা হলো তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হয়েছে, সাধারণত, প্যাভেলিয়ান ক্রিকেটারদের নামে হয়। অথবা জায়গার নামে। দেশের একজন ক্রিকেটারকেও কী যোগ্য মনে করল না গুজরাট ক্রিকেট বোর্ড?

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.