ভালোবেসেই বসন্ত বরণ

‘বসন্ত এলো এলো এলোরে পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বার্তা ঋতুরাজ বসন্তকে ঘিরে। বসন্ত মানেই বাঙালির হৃদয়ে রঙের আভা। বাংলা নববর্ষের ১লা ফাল্গুন ঋতুরাজের অভিষেক। আজ একই দিনে ভালোবাসা দিবস। বাঙালি হৃদয় তাই আড়ম্বরে ভালোবেসেই বসন্ত বরণ করতে চায়।

বসন্ত ঘিরে প্রকৃতি সাজে নববধূ রূপে। গাছের সবুজ পাতার ফাঁক থেকে ভেসে আসা কোকিলের মধু মাখা কুহু কুহু ডাকে মাতোয়ারা হয় কবির হৃদয়। ফলের রাজাকে স্বাগত জানাতে গাছে ফুটে আমের মুকুল। অশোক, মনিমালা হিমঝুরি, রক্তকাঞ্চন ও পলাশের মতো রঙিন ফুলে ফুলে ভ্রমরাও খেলে ফাল্গুনী খেলা। দক্ষিণা বাতাসের শীতল হাওয়া না নাড়া দেয় পথিকে মনে। তাই কবি বলেন, ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায়, ফাল্গুনী মোর মন বনে’।

বসন্তের আগমনে তরুণ হৃদয়েও লাগে রঙিন আভা। এবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসেই বসন্তের আগমন। তাইতো বাড়তি আমেজেই এবারের বসন্তকে বরণ করতে চায় তরুণ প্রাণ। এদিন নতুন ফুলে খোঁপা সাজিয়ে অসংখ্য রমণী বাসন্তী রঙে রঙিন হয়ে রাজধানীর রাজপথ, পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বরসহ পুরো রাজধানী। তরুণরাও পরবে বাসন্তী রঙের পোশাক।

বসন্তের আমেজে পিছিয়ে নেই শিশুরাও। ঝরে পড়া শুকনো পাতার উপর হেঁটে যাওয়ার কুড়কুড়ে শব্দের ছন্দ তাদেরকেও আনন্দিত করে। বসন্ত তাই সকলের জন্য। সবাই চায় এই বসন্তে সবার জীবন হোক গাছের নতুন পাতা ও ফুলের মতো রঙিন। প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করে থাকেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্তো উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বসন্ত বরণ’ উৎসব। তবে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর ‘বসন্ত বরণ’ উৎসবটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অর্থসূচক/এনএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.