বিশেষ ছাড়ের পরও প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ ১১ ব্যাংক

করোনার বিশেষ ছাড়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে। আর খেলাপি ঋণ কমার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণেও। সার্বিক খাতে ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতি উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। একই সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যাও কমে এসেছে। তারপরও প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক।

খেলাপি ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ১১টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এর মধ্যে সরকারি ৩টি ব্যাংকেরই প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো হচ্ছে রূপালী, বেসিক ও অগ্রণী ব্যাংক। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ৬টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি এক হাজার ৫৫২ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এদের মধ্যে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে কোন ব্যাংক তার শেয়ার হোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি পড়ার আশঙ্কা আছে।

আমানতকারীদের অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়ে সুদ বাবদ আয়ই মূলত ব্যাংক ব্যবসা। তাই আমানতকারীদের অর্থ যেন কোন ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে নানা ধরনের বিধিনিষেধ মানতে হয়।

যার মধ্যে একটি হচ্ছে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখা। নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে ০.২৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা ঋণ দিলে ২৫ পয়সা ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হবে।

নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় ঋণ প্রবাহ বাড়াতে গেল বছর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডভান্স ডিপোজিট রেশিও-এডিআর) বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর জন্য এই অনুপাত ৮৭ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ।

অর্থাৎ কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে এখন ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। আর ইসলামি ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারবে। তবে এই হার সময় সময় পরিবর্তন করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মহামারি করোনার কারণে জানুয়ারি থেকে সব ধরনের নিয়মিত ঋণ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন করে খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। এতে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হয়নি। উল্টো কিছু কিছু ঋণ আদায় হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ নীতিমালার আওতায় বড় অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে। এতে গত বছর খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় পাঁচ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত বছর শেষে খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭.৬৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের দরকার ছিল ৬৪ হাজার ৮০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে মাত্র ১২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আর গত জুনে এই খাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল চার হাজার ৪৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.