জাপা নেতার লাশ উদ্ধার, হত্যার পর মাটিচাপা দেয় রোহিঙ্গা কর্মচারীরা

নিখোঁজের এক মাস পর চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেনের (৪২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার দরবেশহাট এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

লোহাগাড়ার দরবেশহাট সওদাগরপাড়া নিজ বাড়ি সংলগ্ন খামারবাড়িতে তাকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় আনসার নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়েছে।

আটক রোহিঙ্গা যুবককে দেওয়া তথ্য এবং দেখানো মতে পুলিশ খামার বাড়ির পেছন থেকে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করেছে বলে জানান লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন মাহমুদ।

আনোয়ার লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের মৃত আহমদ সওদাগরের ছেলে। পেশায় তিনি গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। তার গরুর খামার রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দরবেশহাট সওদাগরপাড়া এলাকায় আনোয়ার হোসেনের খামারবাড়িতে কাজ করতেন দুই রোহিঙ্গা যুবক। টাকার লোভে গত ৩০ ডিসেম্বর তারা আনোয়ারকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে দুজনের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত আনসারকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তার সহযোগীকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি।

লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার দিন আনসার ও তার সহযোগী আনোয়ারকে কোদাল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি জ্ঞান হারান। এরপর তার গলা কেটে লাশ কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে মাটিচাপা দেন তারা। পরে আনোয়ারের পকেটে থাকা ১৮ হাজার টাকা দুজনে ভাগ করে নিয়ে পালিয়ে যান।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ২ থেকে ৩ জন অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুই রোহিঙ্গা যুবককে আমরা চিহ্নিত করেছি। ইতোমধ্যে টেকনাফের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে একজনকে আটকের পর তিনি জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ারকে হত্যার কথা স্বীকর করেছেন এবং তার দেখানো মতে শুক্রবার রাতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন লোহাগাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। পরিবার থেকে তখন বলা হয়েছিল আনোয়ারকে কেউ তাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে এবং নিখেঁজের কয়েক দিনের মাথায় অজ্ঞাত নম্বার থেকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়েছে। পরে পুলিশ তদন্ত করে বুঝতে পারে টাকা চাওয়ার বিষয়টি স্রেফ প্রতারণা।

এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের ছোটভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। নিখেঁজের পর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর আনোয়ার তার দরবেশহাট সওদাগরপাড়া এলাকার খামারবাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে টমটমযোগে বটতলী মোটর স্টেশনে ফোরকান টাওয়ারে তার বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তিনি কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও যাননি।

এদিকে আনোয়ারকে জীবিত ফিরে পেতে পরিবার ও বিভিন্ন সংগঠনের উধ্যোগে লোহাগাড়াতে, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.