বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা

বিশ্বব্যাপী করোনা সংকট প্রায় এক বছর পূর্ণ করতে চলেছে৷ এই সময়কালে বারে বারে প্রশ্ন উঠেছে– ঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে কি এমন বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হতো? নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের এক দল ঠিক এমনটাই মনে করছে৷ তাদের মতে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে কোভিড ১৯-এর প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব সামলাতে চীনের যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল৷ সে দেশের গণস্বাস্থ্য অবকাঠামো শুরুতেই কড়া পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারতো৷

সেই সঙ্গে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ডাব্লিউএইচও আন্তর্জাতিক স্তরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে এমন মারাত্মক আকার ধারণ করতো না বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ তাদের অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টেই এমন চিত্র উঠে এসেছে৷ আগামী মে মাসে ডাব্লিউএইচও-র ১৯৪-টি সদস্য দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে৷

নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ও লাইবেরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এলেন জনসনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের দল ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন৷ বিশ্বের একাধিক দেশে কোভিড ১৯-এর মতো ছোঁয়াচে ভাইরাসের অস্তিত্ব প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন সংস্কার জরুরি বলে তারা মনে করেন৷

উল্লেখ্য, কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ডাব্লিউএইচও-র এমার্জেন্সি কমিটির প্রথম বৈঠক ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ ১১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারি শব্দটিই ব্যবহার করেনি৷ তবে সব দায় শুধু এই প্রতিষ্ঠানের উপর না চাপিয়ে বিশেষ করে মহামারির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সীমিত ক্ষমতার প্রতি নজর আকর্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷

এমন এক সময় বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, যখন বিশ্বের অনেক প্রান্তে করোনা সংকট সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ এমারজেন্সি বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ান মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে প্রতি সপ্তাহে করোনা ভাইরাসের কারণে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে৷

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনো মহামারি এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছিলেন৷ এই প্রতিষ্ঠানকে ‘চীন-কেন্দ্রিক’ আখ্যা দিয়ে তিনি আমেরিকার সদস্যপদ বাতিল করেছিলেন৷ অন্যদিকে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশ এই প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা কাটাতে বাড়তি অর্থ ও ক্ষমতার প্রস্তাব দিয়েছে৷

এদিকে করোনা সংকট মোকাবিলা করতে টিকাদান কর্মসূচি যথেষ্ট দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে বিশ্বের অনেক প্রান্তে অভিযোগ উঠছে৷ চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন দেশ তাই নড়েচড়ে বসছে৷ রাশিয়া সে দেশের সব নাগরিকের জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছে৷ তবে রাজধানী মস্কোয় যথেষ্ট ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা পাওয়া গেলেও দেশের সব প্রান্তে এখনো যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ হচ্ছে না৷ ভারতেও বিশাল আকারে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷ তবে তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও অনেকে সেই টিকা গ্রহণ করছেন না৷ নরওয়েতে ৩৩ জন অশীতিপর বৃদ্ধের মৃত্যুর পর টিকা প্রয়োগে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ সূত্র: রয়টার্স, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.