লেনদেনের চাপ বাড়তেই ভেঙ্গে পড়ল ডিএসইর সিস্টেম

আবারও বড় ধরনের কারিগরি ত্রুটির মুখে পড়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সিস্টেম। আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রেকর্ড লেনদেনের দিনে এই ত্রুটি দেখা দেয়। লেনদেনের চাপ বাড়তেই এক পর্যায়ে ট্রেডিং সিস্টেমটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় ব্রোকারহাউজ ও বিনিয়োগকারীদের।

আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দুই হাজার ৫৪৬ কোটি  ৮২ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে ট্রেডিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে অনেক ক্রয় ও বিক্রয় আদেশ কার্যকর হয়নি। এগুলো কার্যকর হলে লেনদেনের পরিমাণ আরও অনেক বাড়তো বলে মনে করা হচ্ছে।

অনেক বছর পরে লেনদেনের এই নতুন গতিশীলতায় কিছুটা আনন্দের আভাস দেখা দিলেও শেষ বেলায় তা বিষাদে পরিণত হয়। কারণ লেনদেনের চাপে স্থবির হয়ে পড়ে ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেম।

এক ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান অর্থসূচককে নিশ্চিত করেছে, আজ বেলা ২টার কাছাকাছি সময় থেকে ওইসব প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে প্রচণ্ড সমস্যা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বেলা ২টার পর থেকে কোনো লেনদেনই করা যায়নি। এসব ব্রোকারহাউজের কয়েকটি শীর্ষ ২০ ব্রোকারের তালিকায় অবস্থান করে।

লেনদেন বন্ধু হয়ে পড়ায় নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়েছেসংশ্লিষ্ট ব্রোকারহাউজ ও তার গ্রাহকদেরকে। অনেক বিনিয়োগকারী অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা না থাকা সত্ত্বেও দিনের প্রথমভাগে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। দিনের শেষভাগে অন্য কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে মূল্য সমন্বয় করতেন তারা। কিন্তু ওই সময়ে লেনদেন বন্ধ হয়ে পড়ায় তারা সমন্বয় করতে পারেননি। তাতে একদিকে তিনি ব্রোকারহাউজের কাছে খেলাপী হয়েছেন। অন্যদিকে কাগজেকলমে ব্রোকারহাউজের আইন লংঘন হয়েছে।

আবার অনেক বিনিয়োগকারী শেষ বেলায় যেসব ক্রয় আদেশ দিয়েছিলেন তাদের ওইসব আদেশ কার্যকর হয়নি। তাদের চোখের সামনে শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু তারা কিনতে পারেননি। আগামীকাল ওই শেয়ার হয়তো বাড়তি দামে কিনতে হবে তাদের।

শুধু শেষ বেলায় নয়, দিনের প্রথমভাগেও কোনো কোনো ব্রোকারহাউজে লেনদেনে সমস্যা হয়েছে। বিভিন্ন আদেশ কার্যকর হতে ময় লেগেছে অনেক বেশি।

লেনদেনের এই সমস্যার কারণে গ্রাহক ও ব্রোকারহাউজের মধ্যে কিছু ভূল বুঝাবুঝির ঘটনাও ঘটেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্রোকার অর্থসূচকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডিএসইর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অযোগ্যতা ও গাফিলতির কারণে ব্রোকার ও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডিএসইর নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নানা সুযোগ-সুবিধা নিতে যত ব্যস্ত, ততই উদাসীন স্টক এক্সচেঞ্জটির সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে। বিশেষ করে ট্রেডিং সিস্টেমসহ স্টক এক্সচেঞ্জে আইটি প্ল্যাটফরম খুবই দুর্বল।

তিনি বলেন, এমন সমস্যা আর দুয়েকবার হলে অনেক গ্রাহককে ধরে রাখা কঠিন হবে। তারা এই হাউজ ছেড়ে অন্য হাউজে চলে যেতে পারেন।

অন্য একজন ব্রোকার অর্থসূচককে বলেন, ডিএসই তাদের ব্যর্থতা ও সমস্যার বিষয়টিও স্বীকার করতে চায় না।  বিষয়টিকে সমস্যা মনে করলেই না কেবল সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, লেনদেনের সমস্যার বিষয়ে ডিএসইর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করেছে, কোনো কোনো ব্রোকারহাউজে কেনার লিমিট শেষ হয়ে যাওয়ায় সিস্টেম কোনো অর্ডার নেয়নি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, বিক্রির তো কোনো লিমিট ছিল না, তাহলে ওই অর্ডারও নেয়নি কেন সিস্টেম?

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফরমটি বড়জোর দেড় হাজার কোটি টাকার লেনদেন সামলানোর উপযোগী। লেনদেনের পরিমাণ এরচেয়ে বাড়লেই এটি হোঁচট খেতে থাকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ডিএসইর দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। স্টক এক্সচেঞ্জটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হকের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম অর্থসূচককে বলেন, ডিএসইতে লেনদেনের ত্রুটির বিষয়টি আমরা মনিটর করছি। আগামীকাল যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.