পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, বিএনপি-জামায়াত চক্র কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, কারণ তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং জনগণের কোনো উন্নয়ন চায় না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে। অনেকে বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না। বিএনপি কোন মুখ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং নির্বাচনের ন্যায্যতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তারা ২০টি দল, কিন্তু তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং পরে তারা উপনির্বাচনে আরও একটি আসন পেয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয়ের ভয়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল।

ওয়েস্টিন টোকিওতে আয়োজিত জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত চক্র ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করে ৫০০ জনকে হত্যা এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছিল। মানুষের যদি মানবিক গুণ থাকে, তাহলে তারা কখনোই মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে না। যারা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কোন মুখে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে দেশব্যাপী স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম বিএনপি’র সময় বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো প্রদত্ত সুবিধা বন্ধ না করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে মানুষের মন জয় করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে, তারা ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছেন কারণ যারা ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেবেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন।

যারা বলতে চায় যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই তাদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে বাংলাদেশে কেবল তখনই গণতন্ত্র ছিল যখন দেশে স্বৈরাচার, ভোট কারচুপি এবং হ্যাঁ বা না ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র নানাভাবে নির্বাচন নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। অন্যদিকে, তার দল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা আওয়ামী লীগ শাসনামলে সকল উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘতম মেয়াদ পার করে বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো রাষ্ট্রপতি নেই যিনি এত বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবে বিদায় নিয়েছেন। জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল এবং অন্য রাষ্ট্রপতিরা অস্বাভাবিক উপায়ে তাদের রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়েছিলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এটা হয়।

তিনি বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যারা দেশে গণতন্ত্র দেখে না এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং মানুষ হত্যার পর লাশ গুম করে তাদের পক্ষ নিচ্ছে। তাদের কোন মানবাধিকার ছিল না কারণ তারা তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তার মা ও ভাইদের হত্যার পরেও মামলা করতে পারেনি কারণ খুনিরা ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা শাস্তির বদলে উপহার পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তারা দুই দেশের সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু, তারা অনুরোধে কর্ণপাত করে না।

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, খুনিদের (বঙ্গবন্ধুর) নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে তারা বাংলাদেশে মানবতা খুঁজে। তার সরকার বাংলাদেশে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। তিনি সমাজ ও দেশ যাতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত থাকে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের আগ্রহ আছে তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারেন।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে যাতে অন্তত খাবারের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সে লক্ষ্যে তার সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি সকলকে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বান জানান যাতে বাংলাদেশের খাদ্যের জন্য কোনো দেশের ওপর নির্ভর করতে না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে কেউ যেন গৃহহীন ও ভূমিহীন না থাকে তা নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে প্রতিটি মানুষকে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে আর্থ-সামাজিক উন্নতির দিক থেকে বাংলাদেশ পুরোপুরি বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.