বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। ইতোমধ্যে দেশটির নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত করেছে। একই তালিকায় রাখা হয়েছে পাকিস্তানী শিক্ষার্থীদেরও।
যুক্তরাজ্যের কঠোর অভিবাসন নীতি ও ভিসা অপব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস পাকিস্তান ও বাংলাদেশ “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” দেশ হিসেবে বিবেচনা করছে। এর আলোকেই আলোচিত নয় বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ভর্তি স্থগিত বা সীমিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফাইনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ঈগল সতর্ক করে বলেছেন, স্টুডেন্ট ভিসাকে ব্রিটেনে বসতি স্থাপনের ব্যাকডোর হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশ্রয় দাবির (অ্যাসাইলাম ক্লেইমস) সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় হোম অফিস প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আরও কঠোর নজরদারি শুরু করেছে।
২০২৪ সালের শুরুতে ছাত্র স্পনসর লাইসেন্স ধরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বর্ডার কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট (বিসিএ)–এর নতুন শর্ত আরোপ করে যুক্তরাজ্য। নতুন নিয়মে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
কিন্তু পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার যথাক্রমে ১৮ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ, যা নতুন সীমার চার গুণ পর্যন্ত বেশি।
নিয়ম কঠোর হওয়ার পর একে একে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি স্থগিত বা সীমিত করছে। এগুলো হলো- চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় – পাকিস্তান থেকে ভর্তি ২০২৬ সালের শরৎ পর্যন্ত স্থগিত, উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়–পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ বন্ধ, ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন (ইউইএল)– পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত, সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়–পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি স্থগিত, কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়– একইভাবে কঠোর ভর্তি নিয়ন্ত্রণ, হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়–২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি বন্ধ করেছে।
হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, “দীর্ঘ ভিসা প্রসেসিং সময় এবং কঠোর কমপ্লায়েন্স যাচাইয়ের কারণে” এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যেসব ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তার অর্ধেক এসেছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে। এ ছাড়া দুই দেশের শিক্ষার্থীদের আশ্রয় আবেদনও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে—অনেকেই কাজ বা পড়াশোনার ভিসায় এসে পরে আশ্রয় চান।
লাহোরভিত্তিক শিক্ষা পরামর্শদাতা মরিয়ম আাব্বাস বলেন, ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণে শেষ মুহূর্তে ভর্তি বাতিল হওয়ায় প্রকৃত শিক্ষার্থীরা মানসিক ও আর্থিক সংকটে পড়ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানের বহু এজেন্সি ভুয়া আবেদন বানাতে সহায়তা করছে। তারা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নয়, কমিশন নিয়ে বেশি আগ্রহী।
আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা বিশেষজ্ঞ ভিনসেঞ্জো রাইমো বলেন, কঠোর নিয়ম কম ফি-ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে। সামান্য কিছু সন্দেহজনক আবেদনও তাদের স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
সরকারি পূর্ব সতর্কতা অনুযায়ী, ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় আগামী মূল্যায়নে অন্তত একটি বিসিএ মানদণ্ডে ব্যর্থ হতে পারে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান স্পনসরশিপ অধিকার হারাতে পারে এক বছরের জন্য। ফলে প্রায় ১২ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভর্তি কমে যেতে পারে।
হোম অফিস জানিয়েছে, আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দেই। তবে নিশ্চিত করতে চাই—যারা যুক্তরাজ্যে আসে তারা যেন প্রকৃত শিক্ষার্থী হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.