বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) যুক্তরাজ্যের কোম্পানিজ হাউসে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ৩৫ কোটি ডলার ফেরতের দাবি জানিয়েছে। ইউসিবির ফরেনসিক অডিটের তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থ ব্যাংকটি থেকে পাচার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কোম্পানিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন তিন শতাধিক প্রপার্টি, যার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের গ্র্যান্ট থর্নটন প্রশাসকরা এসব সম্পদের একটি অংশ বিক্রি করে ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। ঋণদাতাদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক, ব্রিটিশ আরব কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং বাংলাদেশের ইউসিবি।
উল্লেখ্য, গত কয়েকমাস ধরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ইউসিবির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অনৈতিক লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর পুরনো পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করলে এই প্রভাবশালী মহল বাদ পড়ে।
ইতোমধ্যে ইউসিবির নিজস্ব ফরেনসিক অডিট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মেলে। বেনামি ও কাগুজে কোম্পানির মাধ্যমে লোন পাস করিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে অর্থ সরিয়ে তা লন্ডন ও দুবাইয়ে বাড়ি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউসিবি সেই অর্থ ফেরত চেয়ে আবেদন করেছে।
গত জুলাই মাসে দুদকের দায়ের করা মামলায় মাহামান্য আদালতের নির্দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সাবেক ইউসিবি চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ সাত সাবেক পরিচালকের মোট ৫৭০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন বশির আহমেদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এম এ সবুর, বজল আহমেদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং রুক্সানা জামান।
তবে শেয়ার বাজেয়াপ্ত হওয়া ও ব্যাংকটিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করা কিছু সাবেক পরিচালক আদালতে আবেদন করে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বন্ধের চেষ্টা চালান, যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বশির আহমেদ, যিনি একাধিক অর্থপাচার মামলায় অভিযুক্ত এবং বিদেশ ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন। রয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল, যার ঋণের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ঋণ আদালতের স্টে অর্ডারে ডিফল্টার হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত আছে। এম এ সবুরও এই তালিকায় রয়েছেন, যিনি দুর্বল প্রশাসন ও অভ্যন্তরীণ স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত।
বর্তমান ইউসিবি কর্তৃপক্ষ অতীতের সব অনিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে ইউসিবির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরে এসেছে। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের প্রথম ৭ মাসেই ব্যাংকটির নেট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি ২০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকের আমানত রক্ষার্থে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সংকট মোকাবিলায় এবং ব্যাংককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে যে সাহসী সিদ্ধান্ত ও সংস্কার প্রয়োজন, তা তারা গ্রহণ করছে।
অর্থসূচক/
			
						

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.