বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে- গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের ‘যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের’ তথ্য জানিয়ে সে দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
সোমবার রাজধানীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আজ আমরা আরও কয়েকটি সম্পত্তির তথ্য যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে আকবর সোবহান সাহেবের দুই ছেলে, সাফিয়াত ও সাফওয়ানের কিছু সম্পত্তির তথ্য। আমরা আশা করছি, এসব প্রচেষ্টার সুফল আমরা অচিরেই পাব।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টায় গতি আনতে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডন সফর করেন দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সোমবারের ব্রিফিংয়ে তিনি সেই সফরের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আমরা আমাদের কর্মসূচিতে লন্ডন গিয়েছি। সেই সময় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাও সেখানে সফরে ছিলেন, কাজেই আমাদের যাওয়াটা একসাথে হয়েছে। কিন্তু প্রোগ্রামটা ছিল ভিন্ন। আমাদের আগে থেকে ঠিক করা ছিল। আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম যে, লন্ডনে তাদের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-এনসিএ) এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার) এর সঙ্গে বৈঠক হবে। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং আদালতের আদেশ সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। এবার, আমি বলতে পারি, এনসিএ খুবই কার্যকরভাবে কাজ করেছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের অনুপার্জিত আয় ও পাচারকৃত অর্থে কেনা অনেক সম্পদ তারা জব্দ করতে আমাদের সহায়তা করেছে। এনসিএর এই বন্ধুসুলভ সহযোগিতার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।
মোমেন বলেন, ‘আমাদের লন্ডনে উপস্থিত থাকার সময়ই এই সম্পদ জব্দের আদেশ জারি হয়। জাবেদ সাহেবের মোট ৫৮০টি বাড়ির খোঁজ আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ৩৪৩টি যুক্তরাজ্যে, ২২৮টি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৯টি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রপার্টি বাদ দিয়ে বলছি, শুধু যুক্তরাজ্যের ৩৪৩টি বাড়ির আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২৫ কোটি টাকা। এনসিএ ইতোমধ্যে এই সম্পদ ফ্রিজ করেছে। এ ছাড়া তার প্রায় ২৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ব্যাংক আমানত (প্রায় ৩৫ কোটি টাকা) ফ্রিজ করা হয়েছে। আরও কিছু দেশে তার সম্পত্তি আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে ‘সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তর ও হস্তান্তরসহ মানি লন্ডারিংয়ের’ অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। এর অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের মালিকানাধীন কিছু সম্পত্তি নিয়েও লন্ডনে তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।
দুদকের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি সাবেক লন্ডনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সম্পদ জব্দের কথা জানায় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। এর আগে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছিল এনসিএ।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.