নির্বাচন কবে হবে, সরকারকে তা স্পষ্ট করার কথা বলেছে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি সরকারকে জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া দেখতে চায় জনগণ। দলটি মনে করে, সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে জনগণের আশা পূরণ হবে না।
আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আজকে দুটি বিষয় স্পষ্ট করার কথা বলেছি। এক, নির্বাচনটা কখন হবে? আর আপনি যে নির্বাচনের সময় দিয়েছেন তাঁর মধ্যে জনগনের কোনো ভোগান্তি না হয়, এমন একটা কম্ফোর্টেবল টাইমে এ নির্বাচনটা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। দুই নম্বরে আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া যাতে জনগণ দেখতে পারে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকার করতে পারবে না। মাত্র পাঁচটি সংস্কারে সরকার হাত দিয়েছে। সেগুলো সন্তোষজনকভাবে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে একটা বৈঠক হয় সেখানে প্রধান উপদেষ্টা একটা মেসেজ জাতিকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা দেননি, কিন্তু সমাজের সবদিকে এ বিষয়ে একটা মেসেজ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে একটা আতঙ্কের তৈরি হয়। আমরা সেদিনই এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়েছি। সেদিনে একই সময়ে একটি রাজনৈতিক দল তাঁর কিছু দাবি নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল এবং আরেকটি দল আরেক জায়গায় তাদের দাবি নিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। এই সবগুলোই প্রধান উপদেষ্টার জন্য কিছুটা কষ্টের এবং বিরক্তির কারণ ছিল। এ কারণেই তিনি তার দায়িত্ব পুনর্বিবেচনা করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কার্যত বিষয়টি অফিশিয়ালি সামনে আসেনি। এটা নিয়ে আপনারা আমাদের মতোই বিচলিত ছিলেন, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশ আমাদের সবার, দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকব। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। আর এখানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করবে না, আর এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে কিছু ব্যতিক্রম ঘটেছে। যেটা কিনা সমাজকে উদ্বিগ্ন করেছে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘স্বাভাবিভাবেই এ পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল অর্থবহ কিছু সংস্কার এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার করা। আর এই সংস্কার ও বিচারের মধ্য দিয়ে অর্থবহ একটা নির্বাচন হবে। যেখানে সমতল মাঠ থাকবে। যেখানে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। এবং তাদেরকে কোনো ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। এখানে পেশি শক্তি এবং কালো টাকার প্রভাব চলবে না।’
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। তারা এই অধিকারটাকে প্রয়োগ করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও কয়েকবার বলেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে চান। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেননি। কোন মাস সপ্তাহ তিনি ঘোষণা করেননি। এটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দাবি নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে আছে। এ বিষয়ে আমাদেরও কিছু পরামর্শ ছিল। আমরা তার প্রতি সম্মান রেখে বলেছিলাম, দায়িত্ব আমরাই তাকে দিয়েছি, তিনি চেয়ে নেননি।’
তিনি বলেন, সংস্কার না হয়ে যদি কোন নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচনে জনগণ তার প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখতে পাবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব না।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.