ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ঝাপটা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেই বেশি

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের প্রভাব পড়েছে এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশের পুঁজিবাজারে। তবে সামগ্রিকভাবে চিত্র ছিল মিশ্র। বুধবার পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের বাজারে সূচক কমেছে। অন্যদিকে ভারত ও নেপালে তা বেড়েছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় ভারতের বিমান বাহিনী। এতে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে। এছাড়া পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে অর্ধ শতাধিক মানুষ হতাহত হওয়ার খবর জানা যায়। এই হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে যে, দেশ দুটি বড় ধরনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় এবং উভয় দেশে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হলেও দেশ দুটির পুঁজিবাজারে এর প্রভাব ছিল ভিন্ন ধরনের। ওই ঘটনার পর বুধবার পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে ব্যাপক দর পতন হলেও ভারতের বাজারে উল্টো সূচক বেড়েছে।  পাকিস্তানের পুঁজিবাজারের প্রধান মূল্যসূচক কেএসই-১০০ এদিন ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৪৭ পয়েন্টে নেমে আসে। দিনের প্রথমভাগে অবস্থা ছিল আরও নাজুক। তখন সূচকটি ৫ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। পরে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।

অন্যদিকে বুধবার ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক সেনসেক্স শুন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। অবশ্য দিনের প্রথমভাগে এই বাজারেও বেশ দরপতন হয়েছিল। লেনদেন শুরুই হয়েছিল সূচকের নিম্নমুখী ধারা নিয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে বাজার সে অবস্থান থেকে উঠে আসে। দিন শেষে সূচকটির অবস্থান দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৭৪৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট।

এদিন নেপালের পুঁজিবাজারের মূল্যসূচক এনইপিএসই ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে শ্রীলংকার কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক এএসপিআই শুন্য দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমেছে।

বাংলাদেশ ওই সংঘাতের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কোনো দেশ না হওয়া সত্ত্বেও আমাদের পুঁজিবাজারেই ঝাপটা লেগেছে সবচেয়ে বেশি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আজ ৩ দশমিক ০১ শতাংশ কমে গেছে। এই দর পতন সবাইকে বেশ বিস্মিত করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ক্ষেপনাস্ত্র হামলা কি পাকিস্তানে হয়েছে, নাকি বাংলাদেশে?

বেশিরভাগ বিশ্লেষক এই বাজার আচরণকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের আলোকে এমনটি অস্বাভাবিক হলেও বাংলাদেশে এটিই স্বাভাবিক। এখানে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ অপরিণত। তারা হুজুগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন, গুজবে বিশ্বাস করেন। এ কারণে যে ধরনের আচরণ বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক, সেটিই এখানে স্বাভাবিক ও সাধারণ বিষয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ মনিরুজ্জামান সিএফএ অর্থসূচককে বলেন, আজ আমাদের পুঁজিবাজার যে আচরণ করেছে, সেটিকে কোনোভাবেই যৌক্তিক বলা যায় না। তবে এর কিছু কারণ আছে। আমাদের বাজার মূলত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ভর। এদের একটি বড় অংশ আবার ‘মোমেনটাম ট্রেডার’। অর্থাৎ সূচক বাড়তে থাকলে এরা পাগলের মত শেয়ার কেনেন, আবার সূচক পড়তে থাকলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। কী কারণে সূচক বাড়ছে বা কমছে তা জানার ও বুঝার চেষ্টা করেন না তারা। এছাড়া বড় অংশ বাজারকে অনেকটা জুয়ার মতো ভাবেন।  যেনতেন শেয়ার কিনে স্বল্প মেয়াদে বিপুল মুনাফা করতে চান। আর বাজারে জাংক শেয়ারের দৌরাত্ম্য তো আছেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন শীর্ষ ব্রোকারের বিশ্লেষণেও প্রায় একইরকম বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি অবশ্য বাড়তি কিছু বিষয় যোগ করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা একেবারেই নড়বড়ে হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও বাজারে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না আসায় বিনিযোগকারীদের একটি বড় অংশই আশা হারিয়েছেন। তাই তারা সামান্য নেতিবাচক কিছু দেখলেই অতিমাত্রায় ঘাবড়ে যান, অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখান। আজকেও তেমনটি হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেকেই সংক্ষুব্ধ। তারা বিএসইসি ও সরকারকে চাপে ফেলার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন। এদের কেউ কেউ আজকে অতিমাত্রায় সক্রিয় থেকে বাজারে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দিনের কোনো সময়ে বিক্রির চাপ বাড়িয়ে উল্লেখযোগ্য দর পতন ঘটাতে পারলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সেটিই বাজারে বড় পতন অনিবার্য করে তুলে। আজকেও এমন কিছু ছিল কি-না বিএসইসি ও সিএসইর উচিত সেটি তদন্ত করে দেখা।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.