চলমান বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও ভারতের প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বৈশ্বিক বাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৌশল খাত ভালো করছে, রপ্তানিও বাড়ছে। মূলত রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও চীন ভারতের প্রকৌশল পণ্য কিনছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল (ইইপিসি) এ তথ্য দিয়েছে। খবর বিজনেস লাইন।
বছরের এপ্রিল-আগস্ট মাসে ভারতের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৪ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় ভারতের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে মোট ৪৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬১১ কোটি ডলারের; আগের বছরের একই সময় যা ছিল ৪৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলারের।
ভারতের প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে রাশিয়ার বিশেষ ভূমিকা আছে। ভারত এই সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল–আগস্ট সময়ে যত প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি করেছে, তার ৪০ শতাংশ কিনেছে রাশিয়া। প্রথমত, রুপি-রুবল বাণিজ্যের যে বন্দোবস্ত দেশ দুটি করেছে, তার আলোকে রাশিয়া ভারত থেকে কিছু পণ্য বাড়তি কিনছে। দ্বিতীয়ত, ভূরাজনৈতিক কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় তাদের হাতে বিকল্প আর নেই; সে জন্য তারা ভারত থেকে এসব পণ্য কেনা বৃদ্ধি করেছে।
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, চীন ভারত থেকে প্রকৌশল পণ্য কেনা বাড়িয়েছে, যদিও তাদের অর্থনীতির গতি কমে গেছে। এর মধ্যেও চলতি বছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে ভারত থেকে চীনের প্রকৌশল পণ্য কেনা বেড়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থ মূল্যে তা এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইইপিসির চেয়ারম্যান অরুণ কুমার গারোদিয়া ভারতের নিউজ সংস্থা বিজনেস লাইনকে বলেন, চীন মূলত ভারতের কাছ থেকে অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও গাড়ির সরঞ্জাম কিনছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারতের কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিকস অ্যাগ্রিমেন্ট বা সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি সই হয়, তার আলোকে চলতি বছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে প্রকৌশল পণ্য কিনেছে; আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪৪ শতাংশ বেশি।
সৌদি আরবের সঙ্গেও ভারতের মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে; এই বাস্তবতায় তারাও ভারতের কাছে থেকে আমদানি বাড়িয়েছে।
অরুণ কুমার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের প্রকৌশল পণ্যের সবচেয়ে বড় গন্তব্য হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব, অর্থাৎ যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে তারা। এই দুটি দেশ ভারতের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণে মোটরগাড়ি কিনছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত কিনছে বিশেষ করে বিমান, মহাশূন্যযান, জাহাজ ও নৌকার সরঞ্জাম।
প্রথম চার মাসের রপ্তানির সফলতার ওপর ভিত্তি করে ইইপিসি চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তারা বলছে, চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১১৫ থেকে ১২২ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৫০০ বা ১২ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উঠতে পারে; গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১০৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৩২০ কোটি ডলার।
অরুণ কুমার আরও বলেন, ভারতের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ছে। যন্ত্রপাতি, অটোমোবাইল, ধাতব পণ্য, বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সরঞ্জাম উচ্চ প্রযুক্তি পণ্যের সরঞ্জাম ও উন্নত মানের প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে।
অরুণ কুমার মনে করেন, ভারতের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্নত মানের ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের হিস্যা বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও উন্নত প্রকৌশল খাতে ভারতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। সূত্র: বিজনেস লাইন।
অর্থসূচক/ এএকে
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.