এবার ভাতের হোটেলের মালিক খ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও তাঁর স্ত্রী শিরিন আক্তারের নামে থাকা ব্যাংকের হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক অতিরিক্ত এই কমিশনার ও তার স্ত্রীর হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। ওই চিঠিতে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ছেলে, মেয়ে, মাতা, পিতা, ভাই ও বোনের হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আজ রোববার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছে। এ নির্দেশনার ফলে এসব হিসাবে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। চিঠিতে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও তাঁর স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএফআইইউ বলেছে, আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো লেনদেন করা যাবে না। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করার সময় সাধারণত বাড়ানো হয়।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাব-সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে পাঠাবে।
এই চিঠির ফলে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ভাই ও বোন বিএফআইইউর তদারকির আওতায় আসবেন। তাঁর ভাই হলেন মিঠামইনে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম শাহরিয়ার।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ঢাকার ডিবির প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন হারুন অর রশীদ। বিভিন্ন সময়ে তিনি আলোচিত হয়েছেন। সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হয়। ওই সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথমে তিনজনকে নেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। এরপর বাকি তিনজনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিবি হেফাজতে থেকে ছয় সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় কোটা আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই দিনই ডিবি কার্যালয়ে ওই সমন্বয়কদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়ার বেশ কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন হারুন অর রশীদ।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে একটি রিট আবেদনের শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, ভাতের টেবিলে বসিয়ে দেন।’
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে ডিবির আচরণ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে হারুন অর রশীদকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস)-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুককে জাতীয় সংসদ এলাকায় মারধর করে আলোচনায় এসেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.