স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরানোর প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন সাখাওয়াত
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে।
এদিকে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিল, করে আসছি। এতে মন খারাপের কিছু নেই।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করবো, আর অপারগ হলে চলে যাবো।’
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বর্তমান উপদেষ্টারদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। পরে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৬ উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে শপথ নেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পরে দফতর বণ্টন হলে তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগকে বলব এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে। সেইসঙ্গে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছিলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’
ওইদিন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘উপদেষ্টাদের কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন।’
তখন তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াতকে ক্ষমা চাইতে বললে পরে তিনি নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে শুক্রবার নতুন শপথ নেওয়া ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। আলী ইমাম মজুমদারকে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন আসিফ নজরুল। আদিলুর রহমান খানকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন রিজওয়ানা হাসান।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি নতুন করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাহিদ ইসলামকে। আসিফ মাহমুদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দেখবেন। ফারুকী আজমকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসে তিন দফায় শপথ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে ৮ আগস্ট শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ উপদেষ্টা। তিন উপদেষ্টা সেদিন শপথ নেননি। পরে তাদের মধ্যে ১১ আগস্ট শপথ নেন উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় ও সুপ্রদীপ চাকমা। আর ১৩ আগস্ট শপথ নেন আরেক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। গতকাল আরও চার জনের শপথ নেওয়ার মাধ্যমে এ পর্যন্ত উপদেষ্টার সংখ্যা হলো ২১ জন।
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.