আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ২২ হাজার কোটি রুপি

ভারতের পুঁজিবাজার

গৌতম আদানির শেয়ার জালিয়াতিতে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির চেয়ারপারসন মাধবী পুরী ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছে হিনেডেনবার্গ রিসার্চ। আর এমন খবরে সব মিলিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ২২ হাজার কোটি রুপির বেশি।

ইকোনমিক টাইমসের এক সংবাদে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়।

হিনডেনবার্গের নতুন অভিযোগের জেরে গত সোমবার ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে যায়। পরে অবশ্য দাম কিছুটা বাড়ে। তবে আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৮টিরই শেয়ারদর কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই দিন ভারতের পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটেছে।

তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ২২ হাজার কোটি রুপির বেশি। এতে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্যেও আবার পতন ঘটেছে। বুধবার এক দিনেই তাঁর সম্পদের মূল্য কমেছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলার।

আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতির তদন্ত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) হাত থেকে নিয়ে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) কিংবা বিশেষ তদন্তকারী দলকে দেওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এরই মধ্যে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের জেরে সেবির চেয়ারপারসন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে। এটাকে কেন্দ্র করে ভারতে রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নতুন আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এর বিষয়বস্তু হলো, আদানিদের বিরুদ্ধে বাকি দুটি তদন্তের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হোক।

শেয়ারের সূচক পতনের বিষয়ে অবশ্য বাজার বিশ্লেষকেরা ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা হলো, শেয়ারবাজারের সূচক এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল; ফলে এই বাজারে সংশোধন আসতই। হিনডেনবার্গের অভিযোগ সেই প্রক্রিয়া এখন ত্বরান্বিত হয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তারা বলেছিল, আদানি গোষ্ঠী কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে লাভবান হয়েছে। বিভিন্ন তহবিলের মাধ্যমে আদানিরাই নিজেদের শেয়ারে বিনিয়োগ করে কৃত্রিমভাবে দর বৃদ্ধি করেছে। সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠী বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে। সেই ধাক্কায় আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমে যায়। গ্রুপের মালিক গৌতম আদানি এর আগে ফোর্বস ম্যাগাজিনের শীর্ষ বৈশ্বিক ধনীর তালিকায় পাঁচের মধ্যে থাকলেও একপর্যায়ে ২০-এর ঘরে নেমে যান।

সম্প্রতি হিনডেনবার্গ বলে, ওই সব তহবিলে লগ্নি ছিল সেবির চেয়ারপারসন মাধবী পুরী ও তাঁর স্বামী ধবল বুচের। হিনডেনবার্গের অভিযোগ তদন্তে যে সেবির গা ছাড়া ভাব ছিল, তা মূলত সে কারণেই। সেবির কর্ণধার হয়েও মাধবী ব্যক্তিগতভাবে দুটি পরামর্শক সংস্থা চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, এই জালিয়াতি কাণ্ডে মাধবীর সংশ্লিষ্টতা এক রকম স্পষ্ট। তিনি সংস্থাটি থেকে পদত্যাগ করলেও তাঁর স্বামী পরিচালক ছিলেন। রমেশ বলেন, মাধবী–সেবি দম্পতির দাবি, মাধবী সেবির শীর্ষ পদে যোগদানের পরে ওই কোম্পানি কার্যকর ছিল না; যদিও তা সত্য নয়। ফলে আদানি–কাণ্ড ও সেবির ভূমিকা নিয়ে যৌথ সংসদীয় দলের তদন্ত প্রয়োজন। এদিন মরিশাসের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিশন অবশ্য দাবি করে, হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে উল্লিখিত তহবিলটি মরিশাসে তালিকাভুক্ত নয়।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.