আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারে বেশি পরিমাণে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের জন্য নজর দেয়া যেতে পারে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশ আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, আগামী ২০২৬ সালে দেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশনের প্রাক্কালে অর্থনীতির মৌল কাঠামো, সামাজিক আয় ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে মধ্যমেয়াদী কিছু সংস্কার বা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজেটে সে ব্যপারে দিক নির্দেশনা আরো বলিষ্ঠভাবে প্রস্তাবিত হওয়া দরকার এবং বাজেট বৃদ্ধি ৫ শতাংশের কম হওয়াটা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরো কঠিন হয়ে উঠবে।
তারা বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দরকার সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদীহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরী। এছাড়াও বাজেটে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে। বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্যও বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ । এ মূল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতির উর্দ্ধগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে বলে আইবিএফবি মনে করে।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য ৪ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর রাজস্ব লক্ষমাত্রা যেভাবে বাড়ানো হয়েছে সে তুলনায় ’অন্যান্য খাত’ কমানো হয়েছে। এ বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী কঠিন পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে বলেও মনে করছে সংগঠনি।
সংগঠনটি আরও বলে, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা ছিল ৫.২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পাশাপাশি সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধের এর ক্ষেত্রে আয়কর আইন অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনযোগ্য হওয়ায় এই ধরণের ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ অধিকহারে কমে যাবে।
যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী যাতে বিনিয়োগকারীগণ আস্থার সঙ্গে বাবসা- বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে। এজন্য মূদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় রাখা জরুরী বলে আমরা মনে করে আইবিএফবি।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.