১৭ মন্ত্রী-এমপির স্বজন চেয়ারম্যান প্রার্থী: টিআইবি

মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবুও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের ১৭ জন স্বজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে প্রথম ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের ১৩ জন স্বজন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

মন্ত্রী-এমপিদের ১৭ জন স্বজন হলেন—নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের ছোট ভাই নজরুল মজিদ মাহমুদ, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ, কুমিল্লা সদরে আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নূর মোহাম্মদের ভাই নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই ইহসানুল হাকিম সাধন, দৌলতপুর উপজেলায় রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই বুলবুল আহমেদ টোকন।

নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলায় মাশরাফি বিন মুর্তজার চাচা শ্বশুর ফয়জুল হক রোম, চুয়াডাঙ্গা সদরে সুলাইমান হক জোয়ারদারের ভাইয়ের ছেলে নাঈম হাসান জোয়ারদার, শরীয়তপুর সদরে ইকবাল হোসেন অপুর চাচাতো ভাই বিল্লাল হোসেন দিপু মিয়া, বগুড়ার আমদিঘি উপজেলায় মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ মেহেদির পিতা সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় মোরশেদ আলমের পুত্র সাইফুল ইসলাম দীপু, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় আলী আজম মুকুলের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রুমানা আলীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয়, সিলেটের উহাবল উপজেলায় মোহাম্মদ আবু জাহিরের শ্যালক আখতারুজ্জামান, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মোহাম্মদ মকবুল হোসেনের পুত্র গোলাম হাসনাইন, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নুর উদ্দিন চৌধুরীর ভগ্নিপতি মামুনুর রশিদ, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুর জামান।

রোববার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় টিআইবি।

দ্বিতীয় ধাপের ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানায়, কোথাও কোথাও সংসদ সদস্যদেরও সম্পদ বৃদ্ধিতে পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা। এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ প্রার্থীই ব্যবসায়ী।

টিআইবি তাদের বিশ্লেষণে জনায়, পদে না থাকাদের তুলনায় থাকাদের আয় ও সম্পদ বেড়েছে অনেক বেশি। ২৫ শতাংশ প্রার্থীর ঋণ রয়েছে। প্রতি চারজন প্রার্থীর একজন ঋণগ্রস্ত প্রার্থী রয়েছেন। মোট প্রার্থীর মধ্যে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রার্থী বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত।

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে টিআইবি জানায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পাঁচ বছরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর আয় বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায় অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ১১ হাজার ও নির্ভরশীলদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ১২ হাজার ৪০০ শতাংশ।

টিআইবি আরও জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট প্রার্থী এক হাজার ৮১১ জন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৩৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬৭ জন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ৬০ জনসহ মোট ৪৬২ জন প্রার্থী ঋণগ্রস্ত।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একদলীয় প্রভাব রয়েছে। অধিকাংশ প্রার্থী এক দলের। এটাকে সুস্থ গণতন্ত্র বলা যায় না।

তিনি বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধি সম্পর্কিত—সেটা দেখা গেছে, যে কারণে সবাই ভোটে জিততে চান।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.