সিএসআর খাতে ২০৪ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংক

সামাজিক দায়বদ্ধতা (করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর) খাতে ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২৩ সালে সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৯২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০২২ সালে এ খাতে ১ হাজার ১২৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সে হিসাবে ২০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়েছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিএসআর সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ৬১টি তফসিলি ব্যাংক ২০২৩ সালে ৯২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে মোট খরচের ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ২৮৯ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতে ব্যয় ১৬৩ কোটি ১০ লাখ বা ১৭.৬৫ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে ব্যয় ৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, মোট খরচের ৭.৩৮ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যয় ৪০৪ কোটি টাকা যা মোট ব্যয়ের ৪৩.৭২ শতাংশ।

প্রতিবেদন বলছে, দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে ৫টি ব্যাংক এক টাকাও সিএসআরে ব্যয় করেনি। ব্যাংকগুলো হলো, বেসিক ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে ৯টি ব্যাংক নিট মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। সেগুলো হলো, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

তবে এ ৯ ব্যাংকের মধ্যে ৫টি ব্যাংক নিট মুনাফা অর্জন না করা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে সিএসআরে ব্যয় করেছে। ব্যাংকগুলো হলো, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন খাতে ২০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ আয়-উৎসারী কাজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং অন্যান্য খাতের আওতায় ব্যয় করার নির্দেশনা রয়েছে।

২০১৩ সালের পর লাইসেন্স পাওয়া ১৩টি ব্যাংকে আগের বছরের নিট মুনাফার অন্তত ১০ শতাংশ পরবর্তী বছরে সিএসআর খাতে ব্যয়ের শর্ত রয়েছে। কোনো ব্যাংক নিট মুনাফা করতে না পারলে তারা সিএসআরে ব্যয় করতে পারবে না। নতুন ব্যাংকের বাইরে অন্য ব্যাংক সিএসআরে খরচ করবে কি না, তাদের নিজস্ব বিষয়।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের ৬টি ব্যাংক (সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতী ব্যাংক লিমিটেড, সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি) আলোচিত সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি সিএসআর ব্যয় করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি এ খাতে ব্যয় করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। যমুনা ব্যাংক ৫৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় করে তৃতীয় অবস্থানে আছে। পর্যায়ক্রমে মার্কেন্টাইল ৫৫ কোটি ৯২ লাখ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৫৩ কোটি ৬২ লাখ, আল-আরাফাহ ৫১ কোটি ৩২ লাখ, এক্সিম ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ, সাউথইস্ট ব্যাংক ৩৯ কোটি ৬৯ লাখ ইউসিবি ৩৮ কোটি ৪০ লাখ এবং ব্যাংক এশিয়া ৩২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো নিট মুনাফার একটি অংশ ছাড়াও সন্দেহজনক আয়, জাকাতসহ অন্যান্য তহবিল সিএসআর থাতে ব্যয় করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আলোচ্য সময়ে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআর খাতে ব্যয়ে করেছে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ৩৮ শতাংশ শিক্ষায় ৩০ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ুতে ২১ শতাংশ ব্যয় করেছে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.