ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রার দরপতন

অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির রাশ ছাড়তে যাচ্ছে। অর্থাৎ নীতিসুদ হার কমাতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত তিন মাসে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দর প্রায় ২ শতাংশ কমেছে।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার খবরে ইউয়ানের দরপতন হয়েছে। রয়টার্সের সংবাদে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, স্পট মার্কেটে ইউয়ানের দর মনস্তাত্ত্বিক সীমা পেরিয়েছে। গতকাল দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দর গত ১৭ নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৪-এ নেমে যায়। চীনে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের ৭ দশমিক ২০ দরকে মনস্তাত্ত্বিক সীমা মনে করা হয়। এলএসএজি এইকন ডেটার তথ্যানুসারে, গতকাল পরের দিকে ডলারে বিপরীতে ইউয়ানের দর ৭ দশমিক ২৩ পর্যন্ত নামে।

বৃহস্পতিবার চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, নীতিসুদ হার কমানো ছাড়া তাঁদের হাতে আর যে অস্ত্র আছে, তা হলো ক্যাপিটাল রিজার্ভ রেশিও বা ব্যাংকের পুঁজির বিধিবদ্ধ হার হ্রাস করা। অর্থাৎ বাজারের প্রত্যাশার সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি কথা বলেছেন। অর্থনীতির সম্প্রসারণে বাজার আরও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছে।

এই পরিস্থিতিতে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করে ইউয়ান কিনতে শুরু করে। ফলে দিনের শেষভাগে ইউয়ানের দর দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২২।

গত তিন মাসে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের দর প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে- বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় ইউয়ানের ওপর চাপ বাড়ে। মূলত অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগাতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির রাশ ছাড়তে যাচ্ছে। অর্থাৎ নীতিসুদ হার কমাতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে জাপানি মুদ্রা ইউয়ান দুর্বল হওয়ার কারণেও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।

সম্প্রতি ১৭ বছর পর নীতিসুদ হার বাড়িয়েছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দর কমেছে; এ ছাড়া আরও কিছু এশীয় মুদ্রার দরও ডলারের বিপরীতে কমছে। এই পরিস্থিতিতে জেনেভাভিত্তিক ব্যাংক ইউবিপির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ কার্লোস কাসানোভা রয়টার্সকে বলেন, এসব কারণে চীনা মুদ্রা ইউয়ানও চাপের মুখে পড়েছে।

কাসানোভা আরও বলেন, বাজারের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস না করা পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে এশিয়ার অন্যান্য দেশের মুদ্রার দরপতন হবে। ফেডের নীতিসুদ হ্রাসের দিনটিকে তিনি ‘ডি ডে’র (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পশ্চিম ইউরোপ মুক্ত করার অভিযান; জুন ৬, ১৯৪৪) সঙ্গে তুলনা করেন, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ডি ডের যে ভূমিকা ছিল, বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ফেডারেল রিজার্ভের নীতিসুদ কমানোর ঘোষণা তার সঙ্গে তুলনীয়।

দরপতন সীমার মধ্যে রাখতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মধ্যবর্তী দর বেঁধে দিয়েছে ৭ দশমিক ১০০৪; অর্থাৎ ইউয়ানের দরবৃদ্ধি বা পতন এই বেঁধে দেওয়া দরের দুই শতাংশের মধ্যে থাকবে। যদিও বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দরে এই মধ্যবর্তী সীমা বেঁধে দিচ্ছে। শুক্রবার যে দর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, রয়টার্সের হিসাব অনুসারে, তা বাজারের হিসাবের চেয়ে বেশি।

এদিকে এশিয়ার বাজারে শেষ মুহূর্তের লেনদেনে গতকাল অফশোর ইউয়ানের দর ছিল ৭ দশমিক ২৭। গত বছরের ১৪ নভেম্বরের পর অফশোর বাজারে এটাই ইউয়ানের সবচেয়ে দুর্বল অবস্থান।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.