ছাদ বাগানে স্ট্রবেরিসহ ৪০ প্রজাতির ফলের চাষ

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ডুবিসায়বর এলাকার প্রত্যন্ত এক গ্রামের মধ্যে ছাদ বাগান তৈরি করেছেন বেকার যুবক হিমেল মোল্লা। তার শখের ছাদ বাগানে স্ট্রবেরিসহ দেশি-বিদেশি ৪০ প্রজাতির ফলের চাষ হয়েছে। সফলও হয়েছে অনেক নতুন প্রজাতির ফল ও ফুল চাষ করে।

সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বন্দর এলাকার হায়দার মোল্লার বাড়ির ছাদ বাগানে এমন চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, হিমেল পড়াশোনা শেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বেকার ঘুরছিলেন। করোনার সময় ইউটিউব দেখে বাড়ির ছাদ বাগানে দেশি বিদেশি প্রজাতির বিভিন্ন ফলের বাগান করার পরিকল্পনা করেন তিনি। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফলের চারা সংগ্রহ শুরু করে। বর্তমানে তার বাগানে দেশি-বিদেশি প্রায় ৪০ প্রজাতির ফল গাছ রয়েছে।

হিমেল মোল্লা বলেন, প্রথমে আমি আম গাছ দিয়ে শুরু করেছিলাম। ধীরে ধীরে বাগানের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়েছে। এরপর আমি বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা সংগ্রহ শুরু করি। আমার বাগানের স্পেশাল হলো- স্ট্রবেরি। এ বছর অনেক ভালো ফলন হয়েছে। এগুলো আমি বিক্রি করি না। পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিয়ে দেই। ফলগুলোর একটি অংশ আমি পাখির জন্য রেখে দেই। পাখি ফলগুলো খেলে আমার ভালো লাগে। বিদেশে চলে যাব বলে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করি না। চাইলে যে কেউ ছাদ বাগান করে মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারে।

এসব ফল গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফলন ধরেছে আর্লি গ্লো, আমেরিকান ফেস্টিবাল, রাবি-৩ জাতের স্ট্রবেরি। এছাড়াও তার বাগানে ব্যানানা, ব্রুনাই কিং, মিয়াজাকি, কিউজাই প্রজাতির আম, মিশরীয়, ব্লাক জেনোয়া, সৌদি ইউলো প্রজাতির ত্বীন, পাকিস্তানি, থাই, মেক্সিকান, সুপার ভাগোয়ান, বিভিন্ন প্রজাতির আনার, বিকসন, ব্লাক রুবি, সবুজ মিস্টি, কোড-২৪ প্রজাতির আঙুর, থাইরেড, থাই গোল্ড, পিংক রোজ, ব্রুনি ও কলি মায়ারসহ প্রায় ৩৫ টি জাতের ড্রাগন ফল গাছ রয়েছে।

হিমেলের বাগানে বাউ লেবু নামে একটি লেবু গাছ রয়েছে, যে গাছটিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রায় বিলুপ্ত গাছ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বছর জুড়ে বাগানের এসব গাছে ফল ধরে। এসব ফলেই হিমেলের পরিবারের ফলের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

হিমেল আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাবেন বলে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের চিন্তা করছেন না। তবে তার প্রতিবেশী অনেক বেকার যুবকের কাছে হিমেল এখন অনুপ্রেরণা। হিমেলের কাছ থেকে এসব গাছের চারা নিয়ে তারাও ছাদ বাগান তৈরি করেছেন।

হিমেলের ছাদ বাগান থেকে চারা নিয়ে যারা বাণিজ্যিকভাবে এসব ফল উৎপাদনের চিন্তা করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম রিফাত মাদবর (২৪) ও অভি হাওলাদার (২৬)। তারা বলেন, তিনি (হিমেল) পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি ফলের গাছ এনে ছাদে চাষ করেছেন। তার গাছে প্রচুর ফল হলেও তিনি বিক্রি করেন না। পাড়া প্রতিবেশীসহ গরিবদেরকে দান করে দেন। তার বাগান থেকে চারা ও পরামর্শ নিয়ে এবছর আমরাও বাগান তৈরি করেছি। আশা করছি আর বেকার ঘুরে বেড়াতে হবে না। এসব ফল বিক্রি করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব।

বড় কান্দি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মামুন মোল্লা বলেন, হিমেল বেকার ছিল। পরে সে ছাদে বাগান করে তার সময় কাটিয়েছে। স্ট্রবেরি ফল দেখতে অনেক সুন্দর, খেতেও মজা। হিমেলের বাগানের ফল খেতে বেশি মজা, কেননা তার বাগানের ফলে কোনো কেমিক্যাল নেই। যদিও হিমেল বাগানের ফল বিক্রি করে না। হিমেলকে দেখে বেকার যুবকেরা অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.