‘মুক্তিপণের জন্য এখনো যোগাযোগ করেনি জলদস্যুরা’

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এবং ২৩ নাবিকের বিষয়ে এখনো জলদস্যুরা মুক্তিপণ চায়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের এই জাহাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সীমানা দিয়ে যায়নি। তারপরও তারা (জলদস্যু) অপেক্ষায় ছিল। মতান্তরে অনেক ভিন্নমত আছে। তারা দখলে নেওয়ার পর জাহাজটি নিয়ে সোমালিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। আজকে ভোর নাগাদ সোমালিয়ার কাছাকাছি তারা নোঙর করেছে। আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি, তারাও যোগাযোগ করেনি।

সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আগের অভিজ্ঞতা আছে। জাহানমণি নামের একটি জাহাজ ২০১০ সালে এমন ঘটনার মুখে পড়েছিল। ১০০ দিনের মাথায় জাহাজটি আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম। এরপর আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল মালয়েশিয়ান জাহাজ আলবেদো। সেখানে আমাদের সাতজন বাংলাদেশি নাবিক ছিল। ইরানি ছিল দুইজন, ইন্ডিয়ান তিনজন, পাকিস্তানি ছিল দুইজন, শ্রীলঙ্কান ছিল পাঁচজন।

তিনি বলেন, এই আলবেদো জাহাজটিকেও তারা ধরে নিয়ে গেছিল, ধরে নেওয়ার পর মালয়েশিয়ান মালিকপক্ষ বললো এই জাহাজের কোনো দায়-দায়িত্ব আমাদের নাই। তখন জাহাজটি সেখানে আটকে থাকে, আমরা এখান থেকে কাজ করি। প্রায় আড়াই বছর পর জাহাজটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় কিছু লোক মারাও যায়। তবে আমাদের লোকগুলো মারা যায়নি। আমাদের লোকগুলোকে তারা নিয়ে সরিয়ে রাখে। প্রায় তিন বছর চার মাস পরে আমরা নেগোসিয়েশন করে কেনিয়ান আর্ম ফোর্সেস দিয়ে উদ্ধার করে এনেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টায় আছি। আমাদের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কথা বলেছেন। ডিজি শিপিং আমাদের সঙ্গে আছেন। জাহাজের যে মালিক তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। মোটামুটি সবপক্ষের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। আমরা এখনও জানি না তাদের কি দাবি দাওয়া। আমরা যদি জানতে পারি তখন হয়তো এটা কৌশলগতভাবেই আপনাদের (মিডিয়া) পুরোপুরি জানাতে পারবো না। গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতিবেদন আসলে তারা ওখানে দেখবে, যখন তারা দেখবে সরকার চাপের মধ্যে আছে তখন তারা কিন্তু তাদের ডিমান্ড বাড়িয়ে দেবে।

খুরশেদ আলম বলেন, যারা এটা নিয়ে নেগোসিয়েশন করবে যেভাবে জাহানমণিকে আনা হয়েছে, যেভাবে আলবেদোকে আনা হয়েছে সে রকম প্রচেষ্টা অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। আশা করি আমাদের যে প্রথম লক্ষ্য নাবিক ২৩ জন এবং জাহাজ মালামালসহ দেশে ফেরত আনা। সেই লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না। আমরা হয়তোবা তাড়াতাড়ি একটা সুসংবাদ দিতে পারবো। আপনারা যদি দেখেন জাহানমণি আনতে একশ’দিন লেগেছে, আর মালয়েশিয়ান জাহাজ থেকে সাতজন ক্রুকে আনতে লেগেছে তিন বছর চারমাস। কাজেই সময় একটা ব্যাপার। খুব একটা সেনশেনাল নিউজ হবে সেটা আশা করা ঠিক হবে না।

তারা কোনো মুক্তিপণ চেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুক্তিপণ আপনাদের সৃষ্টি, মিডিয়ার সৃষ্টি। আমাদের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ তারা চায়নি, মুক্তিপণের ব্যাপারে কোনো যোগাযোগও তারা করেনি।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.