এক বছরে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৩১ কোটি টাকা

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরের এই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৩১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ বা ২১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষি ঋণের স্থিতি ৫৫ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষি খাতে ঋণখেলাপির হার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি।

খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে রয়েছে প্রায় ৩ হাজর ৮০৪ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে এর পরিমাণ ৫৩২ কোটি বা ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকৃত কৃষকের কাছে কৃষি ঋণ পৌঁছালে তা খুব একটা খেলাপি হওয়ার কথা না। কৃষি ঋণ কিছু সরাসরি কৃষকের কাছে যায়, কিছু এনজিওর মাধ্যমে যায়। সবই যে কৃষকের কাছে সরাসরি যায় তাতো না। প্রকৃত কৃষকের কাছে যে ঋণ সরাসরি যায় সেটার রিটার্ন খুবই ভালো। কিন্তু যেগুলো অন্যান্য মাধ্যমে যায় সেগুলো কৃষি ঋণ, কিন্তু আসলেই কৃষক তা পায় না। ওই ঋণগুলোতে খেলাপি বেশি।

এদিকে জানুয়ারিতে কৃষি ঋণ বিতরণ কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে খাতটিতে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তার আগের মাসে (ডিসেম্বর) ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ২১৮ কোটি টাকা। এর আগে নভেস্বর মাসে বিতরণ হয়েছিলো ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে ডিসেম্বর এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল ২৭৩ কোটি টাকা। পরপর দুই মাস কমল কৃষি ঋণ বিতরণ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এ খাতে ২১ হাজার ১৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছিলো ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। সেই গত অর্থ বছরের তুলনায় এই সময়ে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা বা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিলো ১৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসময় ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ হাজার ৫৫১ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে। যার পরিমাণ পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা তাদের পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

ফসলের মৌসুমের ভিত্তিতে সারাবছর সমান হারে কৃষিঋণ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এরপরেও কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১১টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হয়। কোনো ব্যাংক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়।

অপরদিকে কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃ‌ষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাক-সবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.