রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করার জন্য চাপ

রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করতে পশ্চিমা জগত ইউক্রেনকে আর্থিক, সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে এলেও সব প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারছে না৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে বিশাল সামরিক সহায়তার প্যাকেজ আপাতত থমকে আছে৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সহায়তার জন্য অন্যান্য বিকল্পের খোঁজ চলছে৷ হামলার শাস্তি হিসেবে পশ্চিমা জগতে রাশিয়ার যে অর্থ ও সম্পদ বর্তমানে মস্কোর নাগালের বাইরে রাখা হয়েছে, সেই বিশাল অংক ইউক্রেনের জন্য কাজে লাগানোর দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠছে৷

ব্রাজিলের সাঁও পাউলো শহরে জি-২০ গোষ্ঠীর অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশগুলির জি-সেভেন গোষ্ঠী মূল সম্মেলনের আগে সেই প্রস্তাব খতিয়ে দেখেছে৷ মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট অ্যালেন বলেন, যে তাঁর মতে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় রাশিয়ার সম্পদ কাজে লাগানো বা বাজেয়াপ্ত করার বিধান আছে৷ কিন্তু ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য মেয়ার মনে করেন, আন্তর্জাতিক আইনে এমন পদক্ষেপের যথেষ্ট ভিত্তি না থাকায় জি-টোয়েন্টি-সহ অন্যান্য দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন৷ ইউক্রেনের প্রতি ঐক্যবদ্ধ সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার সময়ে তিনি জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীতে আরো বিভাজন সম্পর্কে সতর্ক করে দেন৷

জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিষয় উল্লেখ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন৷ তা না হলে জার্মানি সেই বিবৃতিতে সায় দেবে না৷ রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারতের মতো জি-টোয়েন্টি সদস্য দেশ মস্কোর বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পথে বাধা সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ মার্কিন প্রশাসন অবশ্য সেই লক্ষ্যে চাপ দিচ্ছে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বিষয়টি বিবেচনার জন্য চাপ বাড়ছে৷ ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের সামনে ইউক্রেনের জন্য যৌথভাবে গোলাবারুদ কেনার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি উল্লেখ করেন৷ রাশিয়ার সম্পদ কাজে লাগিয়ে সেই অস্ত্রের জন্য অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি৷

উল্লেখ্য, ইইউ সদস্য দেশগুলি ইতোমধ্যেই রাশিয়ার সম্পদ থেকে মুনাফার অংক কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের জন্য সহায়তার বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছেন৷ বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজে সেই ‘উইন্ডফল প্রফিট’ কাজে লাগানোর পক্ষে ইউরোপে সমর্থন বাড়ছে৷ এবার কমিশন থেকে সেই মর্মে আইনি প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে ইইউ দেশগুলি৷ তবে সেই অর্থ শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারলেও সামরিক সরঞ্জাম কেনার বদলে শুধু বেসামরিক সহায়তার জন্য ব্যবহারের সীমিত সুযোগের পক্ষে সওয়াল করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ ফন ডেয়ার লাইয়েনের ভাষণে এই প্রথম মূল প্রস্তাবের পক্ষে কমিশনের সমর্থনের ইঙ্গিত পাওয়া গেল৷ তিনি বলেন, ইইউ সহযোগীদের সমর্থন না পেলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার জয় এড়াতে ইউরোপকে উদ্যোগ নিতেই হবে৷

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট সদস্য দেশগুলির উদ্দেশ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷ সেইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্ত্র শিল্পখাতকে আরো মজবুত করার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি৷ তাঁর মতে, নিরাপত্তাহীনতা ও রাশিয়ার জয়ের মূল্য বর্তমানে সাশ্রয় করার অর্থের তুলনায় অনেক বেশি হবে৷ ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি ইউরোপের নিজস্ব সুরক্ষা আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.