ট্রাম্প শিবিরের মন জয়ের চেষ্টা করছে ইউরোপ

মার্কিন আর্থিক সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে যে রাশিয়ার হামলা মোকাবিলা করা সহজ নয়, তা সম্প্রতি স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ বিশেষ করে গোলাবারুদ কমে যাওয়ায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী প্রয়োজনমতো হামলার জবাব দিতে পারছে না৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈদেশিক সহায়তা বিলের অংশ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য ৬০০ কোটি ডলার মঞ্জুর করতে চান৷ কিন্তু রিপাব্লিকান দলের ট্রাম্প-পন্থি সংসদ সদস্যদের কারণে নিম্ন কক্ষে সেই প্রস্তাব এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ সেই বিলম্বের খেসারত দিতে হচ্ছে ইউক্রেনকে৷

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে এসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি মরিয়া হয়ে আরো সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন৷ সেখানে উপস্থিত মার্কিন প্রতিনিধিদলও ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে৷ জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ আরো সহায়তার অঙ্গীকার করেছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যামেরিকার মোটা অংকের সহায়তার বিকল্প পাওয়া যায় নি৷ এমনকি ইউরোপ এখনো নিজস্ব অঙ্গীকার পুরোপুরি পালন করতে পারে নি৷

বাইডেন জেলেনস্কিকে বলেন, যে সংসদের নিম্ন কক্ষের অনুমোদন সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী৷ তাঁর মতে, মার্কিন সহায়তার অভাবে ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে আরো জমি হারাক, সেটা একেবারেই হতে দেওয়া চলে না৷ জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সহায়তার প্রশংসা করে কংগ্রেসের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশা প্রকাশ করেন৷

বাইডেনের আমলেই ইউক্রেনের জন্য সহায়তায় এমন বিঘ্ন ঘটলে ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে কী ঘটবে, সে বিষয়ে ইউরোপ ও ন্যাটোর শীর্ষ নেতারা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ সামরিক জোট ন্যাটো সম্পর্কে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য তাদের দেশের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কাঠামোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে৷ অ্যামেরিকার দুই রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির গুরুত্ব স্পষ্ট করার চেষ্টা করছেন তাঁরা৷ ট্রাম্পের দাবি মেনে প্রতিরক্ষা খাতে ইউরোপের নিজস্ব ব্যয় বাড়ানোর দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন তাঁরা৷ চলতি বছরে ন্যাটোর ৩১টি সদস্যের মধ্যে ১৮টি দেশই জিডিপি-র কমপক্ষে দুই শতাংশ ব্যয় করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম প্রধান বিষয় চীনের বাড়বাড়ন্ত রুখতে দুর্বল ইউরোপ যে মার্কিন স্বার্থের ক্ষতি করবে, সেই যুক্তিও তুলে ধরা হচ্ছে৷

গত মাসে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ অ্যামেরিকা সফরে গিয়ে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে এক ভাষণ দেন৷ মিউনিখে তিনি মনে করিয়ে দেন, যে মার্কিন আর্থিক সহায়তার অর্থ অ্যামেরিকা থেকে অস্ত্র কিনতেও ব্যয় করা হবে৷

মোটকথা কেন আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থেই ন্যাটো তথা ইউরোপের সঙ্গে সে দেশের গভীর বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ, ট্রাম্প শিবিরের কাছে বার বার সেই যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা চলছে৷ চীনকে কেন্দ্র করে দুশ্চিন্তা সামনে রেখে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, অ্যামেরিকার জিডিপি বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশের সমান৷ ন্যাটোর সঙ্গে সম্মিলিত অর্থনৈতিক ক্ষমতা ৫০ শতাংশ জিডিপি৷ বিশ্বের সামরিক ক্ষমতার ৫০ শতাংশও ন্যাটোর ঝুলিতে৷ অর্থাৎ স্টলটেনবার্গের মতে, সেই ঐক্য বজায় থাকলে তবেই সবাই নিরাপদ থাকবে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এএফপি

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.