শুরু হলো আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো

অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে এনে দেশে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার, অগ্নি-সুরক্ষা নিশ্চিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সকলের কাছে পৌছে দেওয়া এবং অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে সকল মহলে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়াস নিয়ে শুরু হয়েছে  ‘৯ম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪’ (9th International Fire Safety and Security Expo 2024)।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিনদিন ব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বহুমখী উদ্যোগের জন্য ইসাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বেসরকারি খাত, সরকার যখনই একসাথে কাজ করে আমরা সেসব কাজে সফলতা পেয়েছি। অগ্নি নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সালমান এফ রহমান বলেন, রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টসে অগ্নি দুর্ঘটনার পর প্রধনামন্ত্রী অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিল্প কারখানাগুলো ফায়ার সেফটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আজকে কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর বেশিরভাগই এখন বাংলাদেশে।

অগ্নি নিরাপত্তা দিতে সরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের যতগুলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ফায়ার স্টেশন রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলা এবং দুর্ঘটনার আগে যে রোধ করার জন্য যেসব লাগে তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। শিল্প কারখানাগুলোতে আমরা পরিদর্শন করেছি। বৈদ্যুতিক কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে, বৈদ্যুতিক তার উন্নত মানের ব্যবহারের জন্য স্ট্রাকচারাল বিল্ডিং, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রিভেন্টিভ কাজ গুলো রেগুল্যেটরি অথারিটির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করবো। বিএসটিআইকে শক্তিশালী ও ফায়ার সায়েন্স ল্যাবরেটরি নিয়ে কাজ করার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যের এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন,একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময় ছিলো ৭০ মিলিয়ন, এখন সেটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। কল কারখানাকে আধুনিক করতে হবে। এক্ষেত্রে সেফটি সিকিউরিটির কোন বিকল্প নেই। ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করতে বিজনেস কমিউনিটিকে এগিয়ে আসা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ফায়ার সেফটির জন্য অনেক সময় কেউ কেউ নিম্নমাণের অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। এগুলো দেশের শিল্প, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। অগ্নি সুরক্ষা নিশ্চিতে মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন, বিএসপি(বার), এনডিসি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্মাণ ব্যয়ের ২ শতাংশ ফায়ার সেফটি নিশ্চিতে খরচের জন্য আহ্বান জানান তিনি। ফায়ার সায়েন্স ল্যাব স্থাপনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং সংশ্লিস্টদের সহযোগিতা চান তিনি।

ইসাবের পক্ষ থেকে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল জাকির উদ্দিন আহমেদ, অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইসাবের সহ সভাপতি ইসাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম শাহজাহান সাজু।

অনুষ্ঠানে ইসাবের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন, মোঃ মতিন খান- ভাইস প্রেসিডেন্ট, মোহাম্মদ মাহমুদ – ভাইস প্রেসিডেন্ট, মোঃ মনজুর আলম – ভাইস প্রেসিডেন্ট, এম মাহমুদুর রশিদ – ভাইস প্রেসিডেন্ট, মোঃ মাহাবুর রহমান- এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি, মোঃ নূর-নবী – কোষাধ্যক্ষ, মোঃ ওয়াহিদ উদ্দিন- পরিচালক,  ইঞ্জিঃ মোঃ আল-এমরান হোসেন- পরিচালক, মেজর মোঃ আশেক কামাল (অব) – পরিচালক, মোঃ রফিকুল ইসলাম – পরিচালক।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম শাহজাহান সাজু, সেক্রেটারি জেনারেল জাকির উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মাহমুদ এ খোদা, প্রচার সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এডিশনাল ডিরেক্টর আনোয়ার হোসেন।

৯ম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪: প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৩০টি দেশের শতাধিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে যারা তাদের ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির অত্যাধুনিক পণ্যগুলো প্রদর্শন করবে। তিনটি ক্যাটাগরিতে পন্য প্রদর্শন করা হবে এই এক্সপোতে। যার মধ্যে থাকছে ফায়ার সেফটি সলিউশন, সিকিউরিটি সলিউশন ও বিল্ডিং অটোমেশন। এই বছরের এক্সপো তে ‘ইসাব সেফটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ভবন, আবাসিক ভবন ও শিল্প কারখানা; এই তিন ক্যাটাগরিতে যারা যথাযথ নিয়মনীতি মেনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন তাদের অ্যাওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হবে। এছাড়াও অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য ফায়ার ফাইটারদের পরিবারকেও এবার ইসাবের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

৯ম বারের মতো আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আগামী ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। তিনদিন ব্যাপী এই এক্সপো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বেলা ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের তৈরি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো সকলের সামনে তুলে ধরা হবে বলে উল্লেখ করেন ইসাবের সভাপতি।

৯ম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো ২০২৪ এর কো-পার্টনার হিসেবে রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে FEBOAB, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই প্রদর্শনীতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে এফবিসিসিআই।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.