পাকিস্তানের নির্বাচন: জোট গড়তে দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ

পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী একক দল হিসেবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল–এন) ৭১টি৷ সর্বশেষ ফলাফল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৩৷ আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিতসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৯টি আসনে জয়ী হয়েছেন৷

এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে দেশটির জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ১৩৪টি আসনে জয়ী হতে হবে৷ কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন৷

শনিবার দেশটির সেনাপ্রধান বলেন, পাকিস্তানের ‘স্থিতিশীল শক্তি’ দরকার এবং ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷’

পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপক৷ জেনারেলরা দীর্ঘসময় দেশ পরিচালনা করেছেন৷ সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার পর জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনির বলেছেন, ‘নৈরাজ্য ও মেরুকরণের রাজনীতির পরিবর্তে দেশে স্থিতিশীল শক্তির প্রয়োজন৷ নিরাময়ের ছোঁয়া প্রয়োজন৷’

বেশিরভাগ আসনের ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ৯৯টি আসনে জিতেছে, যার মধ্যে ৮৮ জন প্রার্থী ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট৷ এদিকে শরিফের পিএমএল-এন পেয়েছে ৭১টি এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৩টি৷ ২৬৫টি জাতীয় পরিষদের মধ্যে মাত্র ১৫টির ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে৷ সেই অনুযায়ী, দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় লাভ করেছে পিএমএল-এন৷

ভোট গণনার বিলম্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা সমালোচনা৷ বিষয়টি নজর এড়ায়নি আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও৷ সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই নির্বাচন যেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে৷ প্রিয় পাকিস্তান যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধির আশ্রয়স্থল প্রমাণিত হয়, তেমনটাই কামনা করছি৷’

ভোটের আগে বেশ কয়েকটি দীর্ঘ কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণার পর ইমরান খান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি৷ ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাকে সরকার থেকে অপসারণ করা হয়৷ তখন ইমরান বলেছিলেন, এটা সামরিক বাহিনীর সাজানো ঘটনা৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভোটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনে অনিয়মের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে৷ শরিফের দলকে সরকার গড়তে হলে শরিকদের সাহায্য নিতেই হবে৷ এ পরিস্থিতিতে জোট সরকার গড়তে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) একমত হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে৷ পিপিপির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি৷ তিনি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সন্তান৷ বিলাওয়ালের দল এই মুহূর্তে কিংমেকারের ভূমিকায় রয়েছে৷

শোনা যাচ্ছে, পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও তার বাবা পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ৷ শাহবাজ শরিফ ‘পাকিস্তানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে’ পিপিপির শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান৷

এদিকে, পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, তার দলের সম্ভাব্য জোট নিয়ে পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক কথোপকথন হয়নি।

এর আগে শরিফের দল এবং অন্যান্য দলের মধ্যে জোটের আলোচনা হয়৷ সমর্থকদের শরিফ বলেছেন, ‘অন্যদের সমর্থন ছাড়া সরকার গঠনের জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই এবং আমরা জোটে যোগদানের জন্য মিত্রদের আমন্ত্রণ জানাই যাতে আমরা পাকিস্তানকে সমস্যামুক্ত করতে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে পারি৷’

দু’টি ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দি ইমরান সমাজমাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স)-এর সাহায্যে ভাষণ দিয়েছেন৷ ইমরান খানের দলের প্রধান গোহর আলি খান বলেছেন, পিটিআই সরকার গঠনের চেষ্টা করবে৷ শনিবার রাতের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ না হলে রোববার দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে দলটি৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি,এএফপি, রয়টার্স

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.