যুদ্ধক্ষেত্রে জেলেনস্কি, নেতৃত্বে রদবদলের ইঙ্গিত

টানা প্রায় দুই বছর ধরে রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেনের সৈন্যদের মনোবল অটুট রাখা দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলি থেকে সামরিক সহায়তায় টান পড়লে যুদ্ধক্ষেত্রে যখন সৈন্যরা অসহায় বোধ করে, তখন তো বটেই৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি প্রায়ই ঝুঁকি সত্ত্বেও অঘোষিত সফরে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছেন৷ রোববার তিনি দেশের দক্ষিণে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে রবোৎনিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন৷ গত বছর গ্রীষ্মকালে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে গ্রামটি উদ্ধার করলেও রুশ বাহিনী সেখানে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যে তিনি সেখানে দাঁড়ানো তাঁর কাছে সম্মানের বিষয়৷ সৈন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি তাঁদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়েছেন৷ পরে জেলেনস্কির মুখপাত্র জানান, সফরের সময়ে প্রেসিডেন্টের কাছেই এক বিস্ফোরণ ঘটে৷ তবে বিষয়টিকে নাটকীয় করে তোলার প্রয়োজন নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে যুদ্ধে ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কমাতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আরো মজবুত করার অঙ্গীকার করেন৷ তিনি বলেন, শত্রুপক্ষের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপের ক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে৷ সেইসঙ্গে সেই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের মতো জরুরি অবকাঠামোর সুরক্ষার আরো উন্নতির প্রয়োজন বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন৷

রাশিয়ার হামলা শুরু হবার প্রায় দুই বছর পরে ইউক্রেন একদিকে জোরালো প্রতিরোধ চালিয়ে গেলেও অধিকৃত এলাকা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারে নি৷ ফলে দেশ-বিদেশে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সেই ব্যর্থতার জন্য কিছু সমালোচনার মুখে পড়ছে৷ এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নেতৃত্বে বড় রকম রদবদলের মাধ্যমে ‘নতুন সূচনা’-র প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন৷ ইতালির এক টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জনপ্রিয় প্রধান ভালেরি জালুঝনির সঙ্গে জেলেনস্কির সংঘাতের বিষয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে৷ কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, তাঁকে পদচ্যুত করতে ব্যর্থ হলে জেলেনস্কি অন্যান্য পদে রদবদল আনার চেষ্টা করছেন৷ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে জালুঝনি একাধিকবার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরে জেলেনস্কির রোষের শিকার হয়েছেন৷ এমনকি জেলেনস্কি তাঁকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও শোনা গেছে৷

গত রোববার প্রচারিত টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ঐক্য ও দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন৷ তার মতে, যুদ্ধে জয়ের লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে৷ উৎসাহ না হারিয়ে ইতিবাচক শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে চলে আসা রাশিয়ার স্বঘোষিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মনোবল চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.