গাজায় ইউএনআরডাব্লিউএর বিকল্প নেই: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ইউএনআরডাব্লিউএ-কে এতদিন ধরে যারা অর্থ সাহায্য করছিল তাদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করবেন তিনি। তাদের বোঝানো হবে যে, ওই সংস্থাটি ছাড়া গাজায় কাজ করার মতো আর কোনো বিকল্প সংস্থা নেই।

গত রোববার ইসরায়েল অভিযোগ করেছিল, ইউএন এজেন্সি ফর ফিলিস্তিন রিফিউজিসের (ইউএনআরডাব্লিউএ) একাধিক সদস্য হামাসকে সহযোগিতা করছে। তারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সঙ্গেও জড়িত। জাতিসংঘ জানায় তারা ১২ জন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এরপরেই জাতিসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়, এই সংস্থাটি ছাড়া গাজায় কাজ করা অসম্ভব। কারণ এই সংস্থাটির মতো গাজার মানুষকে আর কেউ চেনে না। কোথায় কখন কীভাবে সাহায্য পাঠাতে হবে, এই সংস্থাটি তা সবচেয়ে ভালো জানে।

এদিকে ইসরায়েলের অভিযোগের পর জার্মানি, আমেরিকার মতো একাধিক দেশের ডোনার বা সাহায্যকারী এই সংস্থাটিকে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে জড়িতদের সাহায্য করা হবে না, এমন একটি মনোভাব তৈরি হচ্ছিল তাদের মধ্যে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুতেরেস জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলবেন।

তবে জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থা আনরোয়ার প্রতি অর্থ সাহায্য বন্ধের পশ্চিমা পদক্ষেপ যাতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীদের ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে গণহত্যা জোরদার করা যায় বলে ধারণা করছেন অনেকে।

গাজাবাসীর ধৈর্য ও প্রতিরোধের চেতনা এবং হামাসকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন এই ষড়যন্ত্র কার্যকর করছে ইসরাইল ও তার সহযোগী কোনো কোনো পশ্চিমা সরকার। গত ৭ অক্টোবরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী হামলায় আনরোয়ার কোনো কোনো কর্মী জড়িত ছিল বলে ইসরাইলের দাবি তোলার একদিন পরই কোনো তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন, জার্মান ও ব্রিটিশ সরকারসহ কয়েকটি পশ্চিমা সরকার আনরোয়াকে প্রদেয় বার্ষিক অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধ করেছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থা আনরোয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ সাহায্য দেয়ার কাজ করে আসছে সেই ১৯৪৯ সাল থেকে যখন ইসরাইল ফিলিস্তিন থেকে সন্ত্রাসী প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দূরে চলে যেতে বাধ্য করে। ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি ফিলিস্তিনের ভেতরে ও বাইরে আনরোয়ার ত্রাণ সাহায্য পাচ্ছিল। বিশেষ করে গাজার যুদ্ধ-কবলিত বেসামরিক জনগণের জন্য এই ত্রাণ সাহায্য বেশ জরুরি বা অপরিহার্য।

এদিকে রাশিয়া, ইরান ও হামাস পশ্চিমা দেশগুলোর এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাও ইসরাইলের বানোয়াট দাবিকে সত্য ধরে নিয়ে আনরোয়াকে অর্থ সাহায্য দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে আরও জোরালোভাবে শরিক হচ্ছে এইসব সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি লড়াইয়ে ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইসরাইলের পরাজয়কে আড়াল করতে এবং ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও গাজার অধিবাসীদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ জোরদার করতে ইসরাইল এই অপবাদ প্রচারের আশ্রয় নিয়েছে।

গাজায় গণহত্যার দায়ে হেগের আদালতে দক্ষিণ-আফ্রিকার সরকারসহ বহু দেশের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ও নিন্দিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও গণমাধ্যমে ইসরাইলের এবং তার সহযোগীদের অবস্থান বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আর এভাবে তারা জাতিসংঘের ত্রাণ-সংস্থার তৎপরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি জাতিসংঘের ওই আদালতের রায়কেও বিশ্ব-জনমতের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।

সামরিক ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের পরাজয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে ইসরাইল এখন তার পশ্চিমা সহযোগীদের সহযোগিতায় এই নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান জোরদার করার পদক্ষেপ নিল। পশ্চিমা সরকারগুলো এমন সময় ইসরাইলের বানোয়াট দাবিকে গুরুত্ব দিল যখন গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় গাজায় আনরোয়ার ১৫০ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। অথচ গোটা পাশ্চাত্য ইসরাইলের এই নজিরবিহীন অপরাধের ব্যাপারে নীরব থেকেছে।

বস্তুত, মঙ্গলবারও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। যেভাবে সেখানে মানুষ বসবাস করছেন, যে পরিমাণ মানুষ গৃহহীন অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকছেন, তা এক কথায় অবর্ণনীয়। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যে পরিমাণ ত্রাণ গাজায় পৌঁছাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি সাহায্য পাঠানো প্রয়োজন। সূত্র: ডিডাব্লিউ, পার্সটুডে, রয়টার্স, এপি, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.