যুক্তরাজ্যে বিতর্কিত রুয়ান্ডা বিল পাস

নিজ দলের ভেতরের বিদ্রোহ ব্যর্থ করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে সফলভাবে নিজেদের রুয়ান্ডা বিল পাস করাতে সক্ষম হয়েছে ঋষি সুনাক সরকার। বুধবার হাউজ অব কমন্সে তা ৩২০-২৭৬ ভোটে পাস হয়।

ঋষি সুনাক সরকার যুক্তরাজ্যে আশ্রয়-প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা করেছে। সরকারের ওই পরিকল্পনা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া আটকাতে এই বিলটি প্রস্তাব করা হয়।

রুয়ান্ডা নিরাপদ দেশ নয়, তাই আশ্রয়প্রত্যাশীদের সেদেশে পাঠিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে বলে যুক্তরাজ্য সরকারের বিতির্কিত এই রুয়ান্ডা প্ল্যান গত বছর আটকে দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

বুধবার পাস হওয়া বিলটি যদি আইনে পরিণত হয় তবে বিচারকরা রুয়ান্ডাকে তৃতীয় নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। যেহেতু বিলটি হাউজ অব কমন্সে তৃতীয় ও চূড়ান্ত বাধা অতিক্রম করে গেছে, তাই এখন সেটি উচ্চ কক্ষ হাউজ অব লর্ডসে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।

বিরোধী দলের নেতা কেইর স্টারমার বিলটির ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাজ্য সরকার তাদের রুয়ান্ডা প্ল্যানের অংশ হিসেবে আশ্রয়প্রত্যাশী যে পাঁচ হাজার জনকে রুয়ান্ডা পাঠিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিল তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশের খোঁজ এখন আর তাদের হাতে নেই বলে স্বীকার করেছে সুনাক সরকার।

স্টারমার প্রশ্ন তোলেন, সরকার তাদের খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, এই নীতি নিয়ে বিতর্কের আগেই তো এটি ব্যয়বহুল ও অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটা কোনো পরিকল্পনা নয়, এটা প্রহসন। শুধুমাত্র এই সরকারই এমন একটি অপসারণ নীতিতে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড অপচয় করতে পারে, যেটি আদতে কাউকে অপসারণ করে না।

রুয়ান্ডা প্ল্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য সরকার সে দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেবে। সেখানে তারা যুক্তরাজ্যে বসবাসের কোনো সম্ভাবনা ছাড়াই আশ্রয় চাইতে পারবে। এই প্ল্যান মূলত ২০২১ সালে করা, যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বরিস জনসন এবং ঋষি সুনাক ছিলেন তার অর্থমন্ত্রী।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরপরই এই পরিকল্পনা করা হয়। কারণ, ব্রেক্সিটের পরও যুক্তরাজ্যে বৈধ এবং অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীরা বিশেষ করে ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে।

বুধবার যে বিলটির উপর ভোট হয়েছে, সেটির লক্ষ্য মূলত সরকারের এই পরিকল্পনাটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ সীমিত করে দেওয়া। তবে সরকার এ-ও বলেছে যে, তারা পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা সূক্ষভাবে যাচাই করে দেখছে। তাছাড়া, রুয়ান্ডা স্পষ্ট করেই বলেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হবে না এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই কেবল তারা কোনো চুক্তিতে অগ্রসর হবে।

যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে তিন হাজার তিনশ কোটি টাকা রুয়ান্ডাকে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের দাবি, এই নিয়ম চালু হলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আর যুক্তরাজ্যে আসবেন না। সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.