যেসব আসনে জিতেছে জাতীয় পার্টি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ২৯৯ আসনের মধ্যে একটি বাদে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মোট ২৯৮ আসনের ফলাফল। সেই ফলাফলে ২২২ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার বিজয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১১টিতে। তবে চমক দেখিয়ে ৬২ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এ ছাড়া, কল্যাণ পার্টি একটি এবং মহাজোটের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি পেয়েছে একটি করে মোট দুটি আসন। অন্যদিকে, খালি হাতে ফিরেছে বিএনপির দলছুট নেতাদের নিয়ে গঠিত শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিসহ ২৩টি দল।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মধ্যে জাপার নির্বাচনে আসা না আসা নিয়েও ছিল দোলাচল। জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের অনেক নাটকীয়তার পর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে আসে দলটি। সেই সমঝোতার ২৬ আসনের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জয় পেয়েছে, অন্য আসন থেকে কোনো জয় আসেনি। যদিও ২৬৫ আসনে প্রার্থী দেওয়া জাপার প্রার্থীরা কদিন পরেই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে থাকেন। যদিও সমঝেোতার আসনে থেকেও হেরেছেন জিএম কাদেরপত্নী শেরীফা কাদের, শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মতো নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার আসন ছিল ২৩টি। এবার তা আরও কমে ১১টিতে দাঁড়ালো।

যেসব আসনে জিতেছেন জাতীয় পার্টি

জিএম কাদের
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনের বেসরকারি ফলাফলে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। লাঙ্গল প্রতীকের এ হেভিওয়েট প্রার্থী ৮১ হাজার ৮৬১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট। মোট ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।

মুজিবুল হক চুন্নু
জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে ৫৭ হাজার ৫৩০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মেজর (অব.) নাসিমুল হক পেয়েছেন ৪২ হাজার ২৩৫ ভোট।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
জাতীয় পার্টিার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লাঙ্গল প্রতীকে ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়ে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২৫১ ভোট।

এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার
পটুয়াখালী-১ আসনে মহাজোটের প্রার্থী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ৫৪ হাজার ৬৩৪ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৮১৫০৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী নাসির উদ্দীন তালুকদার ডাব প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৬৮৭৪ ভোট।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী
ফেনী-৩ আসন থেকে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রহিম উল্লাহ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬২৬ ভোট।

হাফিজ উদ্দিন
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন এক লাখ ৮ হাজার ৫১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে গোপাল চন্দ্র রায় পেয়েছেন ৬৫ হাজার ২০৪ ভোট।

গোলাম কিবরিয়া টিপু
বরিশাল-৩ আসন থেকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। ৫১ হাজার ৮১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আতিকুর রহমান পেয়েছেন ২৪ হাজার ১২৩ ভোট।

এ কে এম সেলিম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বেসরকারি ফলাফলে জয়ী হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম সেলিম ওসামন। তিনি ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। এ নিয়ে সেলিম ওসমান টানা তিনবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী এ এম এম একরামুল হক পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৩ ভোট।

আশরাফুজ্জামান আশু
সাতক্ষীরা-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৭ হাজার ৪৪৭ ভোট।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান
কুড়িগ্রাম-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ভোট পেয়েছেন মোট ৮৮ হাজার ২৩টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুল হাই সরকার পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৭৫৬ ভোট।

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাবেক বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ২০৩ ভোট। এ আসনে ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নামেন মোট এক হাজার ৯৬৯ প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৫টি, জাতীয় পার্টি ২৬৪টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৬৬টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ ছাড়া ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছিলেন ৪৩৬ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফলে বিজয়ীর তালিকায় আসেন আওয়ামী লীগ থেকে ২২২ জন, জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের ১১ জন, মহাজোট মনোনীত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ে বগুড়া-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন আর একই প্রতীকে বরিশাল-২ থেকে জয় পেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া মাত্র একটি আসনে জয়ের মুখ দেখেছে হাত ঘড়ি প্রতীকে ভোটের মাঠে থাকা কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। কক্সবাজার-১ বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন তিনি।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ট্রাক প্রতীকে ২৫টি, ঈগল প্রতীকে ২৩টি, ঢেঁকি প্রতীকে একটি, কলার ছড়ি প্রতীকে তিনটি, কেটলি প্রতীকে পাঁচটি ও কাঁচি প্রতীকে পাঁচটি আসনে জয় পান। সব মিলিয়ে ৬২টি আসনে চমক দেখান স্বতন্ত্রের এই প্রার্থীরা।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.