১৭২ রানের জবাবে খেলতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বল বেরিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। বাঁহাতি এই ওপেনার যেমনটা ভেবেছেন ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটা। বল বেরিয়ে না গিয়ে লন্ডভন্ড করে দেয় কনওয়ের স্টাম্প। খানিকটা বোকার মতোই তাকিয়ে থাকতে হয়েছে কিউই ওপেনারকে। সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হওয়া কনওয়ে এদিন ফিরে গেছেন ১১ রানে।
তাইজুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন টম লাথাম। অনেকটা নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারি ব্যাটের নিচের অংশে লেগে জমা পড়ে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। ফলে ৪ রানেই ফিরে যেতে হয় লাথামকে। বাঁহাতি এই ওপেনারকে ফিরিয়ে টেস্টে ঘরের মাঠে ১৫০তম উইকেট তুলে নিলেন তাইজুল। নিজের পরের ওভারে ফিরিয়েছেন হেনরি নিকোলসকেও। তাইজুলের ঝুঁলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে থাকা শরিফুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
৩ উইকেট হারিয়ে বসা নিউজিল্যান্ড লড়াই করছিল উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের জুটিতে। দলকে দুজন মিলে ৫০’র পথে নিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু মিরাজকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে শর্ট লেগে দিপুর তালুবন্দি হন উইলিয়ামসন। অসাধারণ এক ক্যাচে কিউই এই ব্যাটারকে বিদায় করেন মিরাজ। এর দুই বল পরই টম ব্লান্ডেলকে লেগ বিফরের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি।
এর আগে টস জিতে সিলেটের মতো ঢাকা টেস্টেও আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ঘূর্ণিঝড় মিগযাউমের ফলে সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন ছিল আকাশ। যার ফলে দিনের প্রথম সেশনের শুরুর দিকেই মিরপুরে জ্বলে ফ্লাডলাইট। পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও ষষ্ঠ ওভারেই স্পিনার এজাজ প্যাটেলের হাতে বল তুলে দেন টিম সাউদি। অপর প্রান্ত ডেকে আনা হয় মিচেল স্যান্টনারকেও। দুই স্পিনারের বল হাতে তুলে দিতেই উইকেটের দেখা পায় নিউজিল্যান্ড।
ধৈর্য্য হারিয়ে স্যান্টনারের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরেছিলেন জাকির হাসান। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে মিড অন পার হয়নি। কেন উইলিয়ামসন সহজ ক্যাচ নিলে ফিরে যেতে হয় ৮ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনারকে। পরের ওভারে ফিরে গেছেন মাহমুদুল হাসান জয়ও। এজাজের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে থাকা টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথে হাঁটেন ১৪ রান করা এই ব্যাটার। ২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর মুমিনুল হক ও শান্তর দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশকে টেনে নেয়ার। তবে সেটা পারেননি মুমিনুল। সাজঘরে ফিরে গেছেন দ্রুতই। এজাজের অফ স্টাম্পের বাইরের টার্ন করা ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়েছেন ৫ রান করা মুমিনুল। দলের রান পঞ্চাশ হওয়ার আগে আউট হয়েছেন শান্তও। স্যান্টনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
ব্যাটে-বলে না হওয়ায় বল সরাসরি তার প্যাডে আঘাত হানে। জোরালো আবেদন করলেও শুরুতে আউট দেননি আম্পায়ার। পরবর্তীতে রিভিউ নিয়ে ৯ রান করা শান্তকে ফেরায় নিউজিল্যান্ড। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুশফিক ও শাহাদাত হোসেন দিপু। অনেকটা সময় তারা দুজনে মিলে বাংলাদেশকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে তাদের দুজনের ৫৭ রানের জুটি। কাইল জেমিসনের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করেছিলেন মুশফিক। বল ব্যাটে লাগার পর স্টাম্প থেকে দূরে যাচ্ছিলো। এমন সময় হাত দিয়ে ধরে বলটি আরও দূরে সরিয়ে দেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মুশফিকের এমন কাণ্ডে আবেদন করেন জেমিসন। বাকি ফিল্ডাররা তাকে সঙ্গ দিতেই মুশফিককে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্যা ফিল্ড’ আউট দেন আম্পায়ার। ৩৫ রান করাা মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে দিপুর সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি।
নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন দিপু। গ্লেন ফিলিপসের লেগ স্টাম্পে পড়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে অন পুশ করতে গিয়ে উইকেটকিপার ব্লান্ডেলের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৩১ রান করা দিপু। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ২০, নাঈম হাসান ১৩ এবং শরিফুল ইসলাম ১০ রান করে বাংলাদেশের রান নিয়ে গেছেন ১৭২ রানে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে স্যান্টনার ও ফিলিপস নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.