স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও উন্নয়ন-গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনও নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রেখে সবাই মিলে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। জেলহত্যা দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার পরিবর্তে পুরস্কৃত করে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়, রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার করে। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর সেই যড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতদাতারা পরবর্তী ২১ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। অবৈধ শাসকরা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করে। কিন্তু, বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এই হত্যার বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। দেশের জনগণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। পলাতক খুনিদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জনগণকে দেওয়া ওয়াদা অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে এবং বিচার চলমান আছে। সংবিধান সংশোধন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত প্রায় ১৫ বছরে আমাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যার ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতার জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় চার নেতার অবদান ও আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’

বাণীতে জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.