তারেক জিয়ার বক্তব্য প্রচারের সুযোগ থাকছে না বিএনপির সমাবেশে

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। একই দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের আয়োজন করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শান্তি সমাবেশ’।

শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২০ শর্তে দল দুটিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। ডিএমপি বলেছে, উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল করা হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা বলে গণ্য হবে।

ডিএমপির দেওয়া এক শর্তের কারণে আগামীকাল বিএনপির সমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের (তারেক জিয়া) বক্তব্য প্রচার করার কোনো সুযোগ থাকছে না। কারণ ডিএমপির দেওয়া এক শর্তে বলা হয়েছে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করতে পারবে না বা তার কোন বক্তব্য সমাবেশে প্রচার করা যাবে না।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত। ভিন্ন ৬টি মামলায় বিভিন্ন সময়ে আদালত তাকে নানা মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ৭ বছর, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা যাবজ্জীবন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২০ বছর, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করা সংক্রান্ত মামলায় ২ বছর এবং সর্বশেষ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় ৯ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন তারেক রহমান। এখনো সেখানেই অবস্থান করায় তাকে কোনো মামলার রায়েই জেলে যেতে হয়নি। তার আইনজীবীরা প্রতিটি মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই মূলত লন্ডনে বসে দলটি পরিচালনা করে থাকেন। দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে তিনি অনলাইনে যুক্ত থাকেন; আন্দোলনসহ অন্যান্য কার্যক্রমে দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকেন বলে জানা যায়। দলটি প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা না দিলেও এটা স্পষ্ট তারেক রহমানই প্রধানমন্ত্রী পদে তাদের প্রধান মুখ। দলটি কখনো নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়ে সরকার গঠন করলে তিনিই সরকারপ্রধান হবেন বলে মনে করা হয়। তাই অনেকেরই ধারণা ছিল, শনিবারের সমাবেশে হয়তো তারেক রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিতে পারেন অথবা তার রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হতে পারে।

ডিএমপির দেওয়া অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে-

-অনুমোদিত স্থানের মধ্যেই সমাবেশের সকল কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

-বেলা ১২টার পূর্বে কোনক্রমেই জনসমাগম করা যাবে না।

-নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

-অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোথাও লোক সমবেত হতে পারবে না।

-আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

-ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোন বিষয়ে বাগচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

-অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (১৪.০০ ঘটিকা হতে ১৭.০০ ঘটিকা) সমাবেশ এর সার্বিক কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে।

-সমাবেশ সমাপ্তির পর প্রস্থানের সময় রাস্তায় কোথাও কোন সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বা অবস্থান করা যাবে না।

-রাষ্ট্র বিরোধী কোন কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না। উস্কানীমূলক কোন বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

-সমাবেশে ব্যানারের আড়ালে কোন ধরনের লাঠি-সোটা বা রড সদৃশ কোন বস্তু ব্যবহার করা যাবে না।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.