‘বালুখেকো’ নারী মন্ত্রী খেয়ে দিলেন মনজুর আহমেদকে!

বালুখেকো এক নারী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলার এক মাসের মাথায় পদ হারালেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই থাকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। সন্দেহ করা হচ্ছে, মেয়াদের মাঝখানে হঠাৎ তাকে অপসারণের পেছনে ওই মন্ত্রীর হাত থেকে থাকতে পারে।

এর আগেও নিজ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে জমি অধিগ্রহণকে প্রভাবিত করে তার পরিবারের সদস্য ও কিছু অনুসারীকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই নারী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। জমির অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দেখিয়ে সরকারের ৩৫৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ছিল বলে অভিযোগে বলা হয়। খোদ জেলা প্রশাসক এই অভিযোগ পাঠিয়েছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। তার মাশুল হিসেবে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আজ বুধবার (১৮ অক্টোবর) নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ জনস্বার্থে বাতিল করা হলো।

এর আগে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মনজুর আহমেদকে তিন বছরের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি কমিশনে যোগ দেন ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করল সরকার।

‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩’–এর ধারা ৫(২) এবং একই আইনের ধারা ৫(৩) অনুযায়ী তিনি এ নিয়োগ পান। যোগদানের তারিখ থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যাঁরা বালু উত্তোলন করছেন, তাঁদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।

আজকে দায়িত্ব থেকে সরানোর পরেও তিনি তার বক্তব্য থেকে সরে দাড়াননি। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, নদী রক্ষায় কতটা সততার সঙ্গে কাজ করেছি, তার বিচার জনগণ করবে। সরকার নিয়োগ দিয়েছে, আবার সরকারই বাতিল করেছে। এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না।

এর আগে গত বছর প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে অধিগ্রহণের জন্য বেশি দামে জমি কেনার অভিযোগ উঠে ঐ নারী মন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ঐ ঘটনায় চাঁদপুরের ডিসি অঞ্জনা খান মজলিসকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এর আগে চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের নামে প্রভাবশালী একটি মহল সরকারের কাছ থেকে ৩৫৯ কোটি টাকার বেশি কারসাজি করে। জমির অস্বাভাবিক মূল্য দেখে জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি করে দেয়া হয়েছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদনে কারসাজির ঘটনা ধরা পড়ে। এ কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আলোচিত ঐ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.