ছয় মাসে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হু হু করে বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার খেলাপি ছিল। চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে জনতা ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বা প্রায় ৫০ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বর শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এর ফলে ব্যাংকির বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশই এখন খেলাপি।

এবিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি আবদুল জব্বারের মতামত জানতে মুঠোফোনে কল করলে তিনি তা রিসিভ করেন নি। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমনত ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। তখন ঋণ ছিলো ৮৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। এবছরের জুনে আমানত বেড়ে হয় ১ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। এসময় ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এসময় আমানত বেড়েছে ৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

একের পর এক দুঃসংবাদ রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটি মূলধনও খেয়ে ফেলেছে। সে কারণে চলতি বছরের জুন শেষে দুই হাজার ১৮৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এ ব্যাংক। আগের বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ শাখার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন অর্থসূচককে বলেন, খেলাপি ঋণের ৫০ শতাংশের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। আগে থেকেই জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি অনেক বেশি ছিলো। খেলাপি এখন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যাদের ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছে নেই তারাই জনতার মতো ব্যাংকগুলোতে যায়। কারণ তারা এখান থেকে ঋণ নিয়ে খুব সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাংকে জবাবদিহিতার কোনো যায়গা নেই।

তিনি আরও বলেন, জনতার মতো ব্যাংকগুলোতে বড় বড় কর্পোরেট খেলাপি বেশি। এই ব্যাংকের বোর্ড সভায় যারা দায়িত্বে আছেন তারা ঠিকমতো কাজ করলে খেলাপি এত বাড়তো না। এখানে কর্পোরেট গভর্ন্যান্সের সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এর দায়ভার থেকে অভ্যাহতি নিতে পারে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছিলো এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ করা ঋণ ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে খাতটিতে খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

ডলারের সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ ঋণ দেওয়ার শর্তের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে বলেছে আইএমএফ। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমার চেয়ে উল্টো বেড়েই চলেছে।

অর্থসূচক/সুলাইমান/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.