কবিরাজ সেজে বাসায় লুট, টাকা কম পেয়ে সবাইকে খুন

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় মূলহোতা সাগর আলী (৩১) ও তার স্ত্রী ঈশিতা বেগমকে (২৫) গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ( র‍্যাব)।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে সোমবার গাজীপুরের সফিপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাগর-ঈশিতা দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৪ এর একটি দল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাভারের বারইপাড়া এলাকায় কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন ভুক্তভোগী মোক্তার হোসেন। বিষয়টি নজরে এলে সাগর কৌশলে তার সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করে। বুঝতে পারেন, কবিরাজি চিকিৎসায় আস্থা আছে মোক্তারের।

সাগর তখন জানায়, তার স্ত্রী একজন “ভালো কবিরাজ”। এর আগে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে ফল না পাওয়া মোক্তার মজে যান সাগরের কৌশলী কথাবার্তায়। কথা হয় পরদিন সকালে ওষুধপত্র ও স্ত্রী ঈশিতাকে নিয়ে মোক্তারের বাসায় যাবেন তিনি। এ কাজে ৯০ হাজার টাকার চুক্তি হয়।

এদিকে, সাগর দম্পতির পরিকল্পনা ছিল কবিরাজী চিকিৎসার কথা বলে ভুক্তভোগী পরিবারটির সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের বাড়ি লুট করা। এজন্য গাজীপুরের মৌচাকের একটি ফার্মেসি থেকে এক বক্স ঘুমের ওষুধ কেনে তারা।

কথামতো প্রতারক দম্পতি ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ভুক্তভোগীদের আশুলিয়ার বাসায় উপস্থিত হয়। মোক্তার এবং তার স্ত্রী-সন্তানকে ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ালে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। তখন তাদের হাত-পা বেঁধে বাসা লুট করতে শুরু করে সাগর-ঈশিতা দম্পতি।

মোক্তারের মানিব্যাগ, স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য জায়গা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পায় তারা।

আশানুরূপ অর্থ ও জিনিসপত্র না পেয়ে বটি দিয়ে কুপিয়ে একে একে হত্যা করা হয় মোক্তার, তার স্ত্রী ও ছেলেকে। পরিবারটির সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা মোক্তারের হাতে থাকা আংটি নিয়ে যায়।

ঘটনার পর ভিন্নপথে তারা গাজীপুরের মৌচাকে সাগরের শ্বশুরের বাসায় চলে যায়। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এলে সফিপুর এলাকায় গা-ঢাকা দেয় অভিযুক্ত দম্পতি। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাদের কাছ থেকে নিহত মোক্তারের আংটিটি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‍্যাব জানায়, সাগর মাদকাসক্ত। সে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করে বেড়াত। এর আগে, ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চারজনকে একইভাবে গলা কেটে হত্যা করে সে। ওই ঘটনায় সে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর এ বছরের জুনে জামিনে ছাড়া পায়।

কারাগার থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন পেশার আড়ালে সে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে লিপ্ত হয়। সে কিছুদিন পর পর এলাকা বদল করতো।

র‍্যাব আরও জানায়, গত জুলাইয়ে সে অবৈধ পথে ভারতে যায়। ২০-২৫ দিন সেখানে থেকে আগস্টে দেশে ফিরে কুমিল্লায় কিছুদিন অবস্থান করে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় আসে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় একটি বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। পুলিশ সেখান থেকে এক দম্পতি ও তাদের ১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত গৃহকর্তার ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.