বেসরকারি ঋণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংক খাত

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু প্রথম মাসেই (জুলাই) সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। জুলাইয়ে এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বেসরকারি খাতে। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের মাস জুনে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সংকটে দেশে উৎপাদন কমেছে। বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাতেও ভাটা পড়েছে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে বর্তমানে সময়ে ঋণের চাহিদা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেশি ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে মাঝেমধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এ খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে আবারও পতন দেখা দেয়, যা এখনও চলমান।

সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে।

আগের মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিলো ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ কমেছে ৮ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিলো।

আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ডলার সংকট বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। এতে রিজার্ভের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্রের মূল্য বেড়ে গেছে। এ কারণে ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও তা কমেছে। এতে বেসরকারি খাতে প্রভাব তৈরি হতে পারে।

এদিকে চলতি অর্থ বছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ করা হয়েছিলো। তখন অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, আমাদের দেশের বিনিয়োগ হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। নতুন বিনিয়োগ মানেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি। লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ফলে এটি বিঘ্নিত হতে পারে। বিনিয়োগের অগ্রগতি স্তিমিত হতে পারে। এরফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.