কম প্রবৃদ্ধির রপ্তানি-রেমিট্যান্সে চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে

ডলার সংকটের মধ্যে সদ্য বিদায়ী আগস্টে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে। একইসময়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দুই প্রধান খাতের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে।

দেশের আমদানির পেছনে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। আমদানি ব্যয় মেটাতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপরে নির্ভর করতে হয়। তবে এই খাত দুটিতে কয়েক মাস ধরেই কোন সুখবর নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের আশেপাশে। ২০২১ সালের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার ডলার।

এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিস্তৃতি ততই বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরই বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলসহ খাদ্যপণ্যের দাম। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। চাপ সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে পতন শুরু হয়। এসবের প্রভাবে রিজার্ভে ধারাবাহিক পতন চলছে।

আগের অর্থবছরের মধ্যে চার মাসে প্রবাসীরা ২০০ কোটি ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠায়। এছাড়া অন্যান্য সময়ে দেড়’শ কোটি ডলারের আশেপাশে ছিলো প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ। ঐ অর্থবছরের শুরুর মাসে ২০৯ কোটি ডলার এবং আগস্টে ২০৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলো প্রবাসীরা। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস এর চেয়ে অনেক কম ডলার এসেছে। আবারও মার্চ মাসে ২০২ কোটি ডলারের এবং অর্থবছরের শেষে জুনে ২১৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিলো। রেমিট্যান্সের নেতিবাচক ধারাবাহিকতা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বজায় রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রেমিট্যান্স এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার। সদ্য সমাপ্ত আগস্টে যার পরিমাণ আরও কমে ১৬০ কোটি ডলারে নেমেছে।

অপরদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানি করে দেশের আয় হয়েছিল ৪৫৯ কোটি ডলার। তখন রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিলো ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগস্টে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। এই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য। তবে এ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে কমে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমেছে।

বাংলাদেশ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার-সংকটে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার। এরফলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে তা গত ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিমন্ম। এই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। ২০২২ সালের আগস্টে প্রবাসীরা ডলার পাঠিয়েছিলো ২০৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৩ কোটি ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ে অস্থিরতা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়েই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের ওপরে। এছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বিনিময় হার এখনো হুন্ডির চেয়ে কম। এরফলে বিদেশে বসবাসরত কর্মীরা দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার না করে হুন্ডি বা বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করছেন।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.