এলসি ও ফরেক্স মার্কেট ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি পেয়েছে আইএমএফ

প্রশিক্ষণ দেবে কর্মকর্তাদের

আমদানি এলসি ও ফরেক্স মার্কেট ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা করে বেশ কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে চলমান আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিবে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সাথে সংস্থাটির ঢাকা সফররত প্রতিনিধিদলের সমাপনী বৈঠকে এবিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে গত ১৩ আগস্ট আইএমএফের চার সদস্যের কারিগরি সহায়তা কমিটির সাথে আলোচনায় বসেন গভর্নর। ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ সফর করছে প্রতিনিধি দলটি।

সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিরা চলমান আর্থিক সংস্কারের বিষয়গুলোর অগ্রগতি ও পদ্ধতি পরীক্ষার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক পরিচালনা কাঠামো পর্যবেক্ষণ, রিজার্ভের পর্যাপ্ততা যাচাই, তারল্য পরিস্থিতির পূর্বাভাস ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যাচাই এবং আমদানি এলসি ও ফরেক্স মার্কেট পর্যবেক্ষণ। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে সংস্কার কার্যক্রমের ত্রুটি চিহ্নিত করে তার সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা জানিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিরা। এ সংক্রান্ত একটি প্রোগ্রাম শিডিউল নিয়ে গভর্নরের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। কারা ওই প্রশিক্ষণে অংশ নিবে তাও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের একটি সারট্টাক মিশন এসেছে। তারা মনিটারি অপারেশনসহ সার্বিক বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। তাই বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে দেখেছে কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রোগাম শিডিউল তৈরী করার বিষয়ে গভর্নরের পরামর্শ চেয়েছে প্রতিনিধিদল।

আইএমএফ থেকে নেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু কাঠামোগত সংস্কারে সম্মত হয় বাংলাদেশ। যদিও একে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে ব্যাখ্যা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ অর্থনৈতিক মৌলিক কাঠামোগত যেসব বিষয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাইরে রয়েছে সেসব বিষয়ে সংকারের শর্তে আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্কার শুরু হয়েছে। আর এসব সংস্কারের অগ্রগতি ক্ষতিয়ে দেখতে দফায় দফায় বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

সংস্কারের লক্ষ্যে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকের ঋণে বেধে দেওয়া ৯ শতাংশ সুদহার তুলে দিয়ে ইন্টারেস্ট রেট করিডোরের মাধ্যমে স্মার্ট সুদের হার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ব্যাংকগুলো এই ইন্টারেস্ট রেট করিডোর কিভাবে বাস্তবায়ন করছে তার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এছাড়া চলমান মুদ্রানীতি বাস্তবায়, নীতি সুদহারের করিডোর প্রথা ও ডলারের একক দাম বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চেয়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন ও এর পর্যাপ্ততা, তারল্য পরিস্থিতির সম্ভাব্য পূর্বাভাস ঠিক করা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া আমদানি এলসি ও ফরেক্স মার্কেট ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা করে এর ত্রুটি চিহ্নিত করেছে আইএমএফ প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আইএমফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে চলতি বছরের জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার শর্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ২৩ বিলিয়নের সামান্য বেশি। তবে নীট রিজার্ভের পরিমাণ আরও কম হলেও তা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে দরকষাকষি করতে পারে সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ছাড় দেয়ার জন্য জোড়ালো আবেদন করা হবে।

এর আগে গত ১৮ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নীতি সুদহারের করিডর প্রথা, সুদহারের সীমা প্রত্যাহার, ডলারের একক দাম, আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে রিজার্ভের হিসাবায়নসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের মধ্যে ছিল। ফলে পুরো মুদ্রানীতিটি হয়েছে আইএমএফের ছক অনুযায়ী। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি রোধে মুদ্রা সরবরাহনির্ভর নীতি থেকে সরে এসে সুদহার লক্ষ্য করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.