ব্যারিস্টার সুমনের মুখ বন্ধ রাখতে আদালতে এস আলম

ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের মুখ বন্ধ রাখতে আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন।

পাশাপাশি তারা বিদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ তদন্তে হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত রুলের বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতেও আদালতে আবেদন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এস আলম ও তার স্ত্রীর করা একটি আবেদনে, রুল বিচারাধীন অবস্থায় এস আলম গ্রুপ-সম্পর্কিত স্বতঃপ্রণোদিত রুল নিয়ে ভবিষ্যতে ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ, সৈয়দ সায়েদুল হক ও অন্য গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাতে সাক্ষাৎকার, মন্তব্য ও মতামত না দেয়, সে জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ, একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টের সূত্র ধরে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বিদেশে এস আলম গ্রুপের ১০০ কোটি ডলারের অবৈধ বিনিয়োগের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিবেকের তাড়নায় তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন। কারণ এক সময় বৃটিশরা এখানে শাসন করতো এখান থেকে টাকা লুটে নিয়ে যেত। এখন আমাদের কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেরা বিদেশে টাকা দিয়ে আসেন। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের নাম উল্লেখ করে বলেন, যাদের এ দেশটাকে সিঙ্গাপুর বানানোর কথা ছিল, তারা এদেশের টাকা সেখানে  রেখে এসে সিঙ্গাপুরকে আরও ধনী বানাচ্ছেন। সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট কোটায়, কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট কোটায় এভাবে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, এটা অবৈধ।

অন্য আবেদনে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুলে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে আর্জি জানানো হয়েছে।

এস আলম ও তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের প্রত্যাহার চেয়েও আবেদন করা হয়েছে।

উল্লেখ, জানা যায়, গত ৪ আগস্ট ডেইলি স্টারে “S Alam’s Aladdin’s lamp” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সিঙ্গাপুর ও সাইপ্রাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এস আলম গ্রুপের প্রায় ১০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরা হয়। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব বিনিয়োগের জন্য বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতি নেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে কোনো অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ নেই। এমনকি বছরে একজন ব্যক্তির পক্ষে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই আইনে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসআলমের বিনিয়োগকৃত অর্থ অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বা পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ করছেন।

ডেইলি স্টারে প্রকাশিত নিউজটির রেফারেন্স দিয়ে গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার সন্দেহজনক পাচারের বিষয়ে একটি ব্যাপক তদন্তের নির্দেশ দেন।

এই তদন্তের জন্য হাইকোর্ট বিশেষভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষ করে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দেন আদালত।

গ্রুপটির পক্ষ থেকে রোববার (১৩ আগস্ট) মৌখিকভাবে হাইকোর্টে তদন্ত প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলে আদালত তা খারিজ করে দেন। পরে তাদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয় বলে জানা গেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.