তালেবানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের হস্তক্ষেপের ডাক

প্রায় দুই বছর আগে তালিবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে আন্তর্জাতিক সমাজ দেশটির মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকার খর্বের জোরালো সমালোচনা করে এলেও পরিস্থিতি বদলানোর ক্ষেত্রে কার্যত অসহায় রয়েছে৷ তালেবান সরকার নারীদের শিক্ষা, গতিবিধি, উপার্জন ইত্যাদি কার্যকলাপের উপর পর পর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে৷ এবার আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা তালেবানের উপর আরো চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানালেন৷

জাতিসংঘের বিশ্ব শিক্ষা দূত গর্ডন ব্রাউন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানে লিঙ্গ বৈষম্যকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার ডাক দিয়েছেন৷ প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্রাউন বলেন, তিনি আইসিসি-র প্রসিকিউটর করিম খানকে সে বিষয়ে চিঠি লিখেছেন৷ তাঁর মতে, গোটা বিশ্বে মেয়ে ও নারীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে জঘন্য এই দৃষ্টান্ত বরদাস্ত করলে অন্যরাও সেই পদক্ষেপ নিতে পারে৷ আইসিসি-র প্রসিকিউটর করিম খানের দপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয় নি৷ উল্লেখ্য, তিনি গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছেন৷

ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রশাসন ১২ বছরের বেশি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ নারী কর্মীদের সাহায্যকারী সংগঠনে কাজও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিউটি পার্লার বন্ধ করা, পার্কে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং পুরুষ ‘অভিভাবক’ ছাড়া নারীদের গতিবিধি সঙ্কুচিত করার মতো পদক্ষেপের কারণে তালেবানের প্রবল সমালোচনা করা হচ্ছে৷ তালেবানের যুক্তি, ইসলামি আইনের নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এমন পদক্ষেপ নেবার অধিকার তাদের রয়েছে৷ গর্ডন ব্রাউনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তালেবানের ৮০টি অধ্যাদেশের মধ্যে ৫৪টি নারী অধিকার খর্ব করেছে৷

জাতিসংঘের দূত গর্ডন ব্রাউনের মতে, তালেবানের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে৷ কাবুলে কয়েকজন কর্মকর্তা মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর পক্ষে সওয়াল করলেও কান্দাহারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তার বিরোধিতা করছে৷ ব্রাউন এই ধর্মীয় নেতাদের মত বদল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন৷ তাঁর মতে, ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে নারীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা যে ভুল, সেটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে৷ তিনি মুসলিম দেশগুলির উদ্দেশ্যে কান্দাহারে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে তালেবান নেতাদের বোঝানোর আহ্বান জানান৷ নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাধানিষেধ তুলে নিতে তালেবান নেতৃত্বকে রাজি করানোর চেষ্টা করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন৷

সংবাদ সংস্থা এপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালেবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বর্তমান অনুশাসন অপরিবর্তিত থাকবে৷ তাঁর মতে, আফগানিস্তানে তালেবান খোলা মনে শাসন করছে৷ ইসলামি শরিয়া আইনের ভিত্তিতে বৈধতার ক্ষেত্রে কোনো বড় হুমকিও দেখছে না সরকার৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.