নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চাওয়া নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি আজ । এদিন বেলা ১১টার দিকে এ শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে গত বুধবার (৯ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির আংশিক শুনানি হয়। পরে আবেদনটির পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট।
ওইদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
শুনানিতে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এ মামলায় মূল শুনানি করবেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি অসুস্থ, যে কারণে শুনানি পেছানোর আর্জি জানাচ্ছি।’ তখন আদালত বলেন, ‘আমরা দুদকের বক্তব্য শুনি, আপনি নোট নিন। আমরাও নোট নিচ্ছি।’ এরপর শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হয়নি। হাইকোর্ট মামলাটি বাতিল করেছেন। সেই মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে দুদক এখন পর্যন্ত আপিল করেনি। একই ইস্যুতে মামলায় খালেদা জিয়া মামলা মোকাবিলা করলে শেখ হাসিনা কেন করবেন না?’
জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এ আবেদনটি করা হয়েছে। তাদের (খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের) দেখাতে হবে বিচারিক আদালত অভিযোগ গঠনের আদেশে কোথায় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। আমরা দেখাব আদেশের কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে কেন আপিল করেনি, এটি এ মামলার বিষয়বস্তু নয়। কেন ওই মামলাটি বাতিল করেছেন, তার বিশদ ব্যাখ্যা হাইকোর্টের রায়ে রয়েছে। খালেদা জিয়ার মামলা আর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা এক নয়।’
এর আগে গত ১৭ মে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা। গত ১৯ মার্চ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
অর্থসূচক/এএইচআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.