তদন্ত প্রত্যাহারে হাইকোর্টে এস আলমের আবেদন খারিজ

বহুল আলোচিত এসআলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অবৈধভাবে বিনিয়োগ করার অভিযোগের তদন্ত বাতিলের চেষ্টা আপাতত ভেস্তে গেছে। গ্রুপটির পক্ষ থেকে আজ রোববার (১৩ আগস্ট) মৌখিকভাবে হাইকোর্টে তদন্ত প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন।

এর আগে ৬ আগস্ট হাইকোর্ট বিদেশে এসআলম গ্রুপের বিনিয়োগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক),  বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডির) নির্দেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র অনুসারে, আজ এস আলম গ্রুপের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর বেঞ্চে মৌখিকভাবে আবেদন করেন।

জবাবে আদালত বলেছেন, গত ৬ আগস্ট দেওয়া আদেশটিতে ইতিমধ্যেই স্বাক্ষর করা হয়ে গেছে। এখন সেটি প্রত্যাহার করার আবেদন গ্রহণ করা যাবে না।

জানা যায়, গত ৪ আগস্ট ডেইলি স্টারে “S Alam’s Aladdin’s lamp” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সিঙ্গাপুর ও সাইপ্রাসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এস আলম গ্রুপের প্রায় ১০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরা হয়। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব বিনিয়োগের জন্য বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতি নেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে কোনো অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ নেই। এমনকি বছরে একজন ব্যক্তির পক্ষে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই আইনে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসআলমের বিনিয়োগকৃত অর্থ অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া বা পাচার করা হয়ে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ করছেন।

ডেইলি স্টারে প্রকাশিত নিউজটির রেফারেন্স দিয়ে গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার সন্দেহজনক পাচারের বিষয়ে একটি ব্যাপক তদন্তের নির্দেশ দেন।

এই তদন্তের জন্য হাইকোর্ট বিশেষভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্ত শেষ করে আদালতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দেন আদালত।

এদিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সরকারের দুই সচিব, প্রথম আলোসহ চার পত্রিকার সম্পাদক ও সাতজন সাংবাদিক বরাবর আইনি নোটিশ দিয়েছেন এস আলম গ্রুপ ও এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। নোটিশে আজ রোববার সকাল ১০টার আগে এস আলম গ্রুপ ও এর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাবলিক ডোমেইন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিব এবং তথ্য ও সম্প্রচারসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। পাশাপাশি এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ না করার দাবি জানানো হয়। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ল ফার্ম আজমালুল হোসেন কেসি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস কর্তৃক সাইফুল আলমের পক্ষে জারি করা হয় নোটিশটি।

বিভিন্ন সময়ে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে এস আলম গ্রুপ ও এর মালিকের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। গত বছরের ২৪ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এস আলম গ্রুপের সম্পদের তদন্ত বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ পায়। একই পত্রিকায় ‘এস আলম গ্রুপের আলাদিনের চেরাগ’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ পায় ৪ আগস্ট।

এছাড়া নিউএজ পত্রিকায় গত ৩০ নভেম্বর ‘এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ তুলে নিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর প্রকাশ হয়েছিলো ‘কীভাবে ২৪ বছর বয়সী গ্রিনহর্ন ৯০০ কোটি টাকা ঋণ পেলেন’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ শিরোনামে ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর ৬ আগস্ট বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.