বন্দি নিয়ে মার্কিন-ইরান বোঝাপড়া

সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে আমেরিকাকে বার করে নেবার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার পরেও জো বাইডেন সেই চুক্তি পুনর্বহাল করেননি৷ কিন্তু নেপথ্যে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে৷ সেই ‘নীরব কূটনীতি’-র সুফল হিসেবে ইরান সে দেশে আটক পাঁচ মার্কিন নাগরিককে কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি হিসেবে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে৷

বৃহস্পতিবার তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে তাদের মধ্যে চারজনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এক হোটেলে স্থানান্তরিত করা হয়৷ একজনকে কয়েক সপ্তাহ আগেই একটি বাড়িতে আনা হয়েছিল৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই বন্দি ও তাদের পরিবারের দুঃস্বপ্ন শেষ হচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করেন৷

মার্কিন বন্দিদের প্রতি এমন নরম আচরণের বদলে ইরানও কিছু ছাড় আদায় করতে চলেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে৷ গোপন আলোচনা সম্পর্কে অবহিত কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী পদক্ষেপ হিসেবে ইরান শর্তসাপেক্ষে ৬০০ কোটি ডলারের নাগাল পেতে পারে৷ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে পেট্রোলিয়াম বিক্রি করে প্রাপ্য সেই অর্থ দক্ষিণ কোরিয়ায় জব্দ করা হয়েছিল৷ এবার কাতারে বিশেষ এক অ্যাকাউন্টে সেই অর্থ পাঠানো হবে৷ একমাত্র খাদ্য ও ওষুধপত্র কেনার মতো মানবিক প্রয়োজন মেটাতে ইরানের সরকার সেই ইউরো অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ ব্যয় করতে পারবে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন মনে করিয়ে দিয়েছেন, সেই অর্থ ইরানেরই ছিল৷ তিনি নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড়ের সম্ভাবনা আপাতত উড়িয়ে দিয়েছেন৷ ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী প্রাপ্য অর্থের ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে৷

ইরান অবশ্য আমেরিকার সঙ্গে এই বোঝাপড়াকে বন্দি বিনিময় হিসেবে তুলে ধরছে৷ জাতিসংঘে দেশটির দূতাবাস জানিয়েছে, যে দুই দেশই পাঁচজন করে বন্দিকে ক্ষমা করে মুক্তি দেবে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানিয়েছেন, যে সবকিচু ঠিকমতো চললে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই মার্কিন বন্দিরা ইরান ত্যাগ করতে পারেন৷

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলেও মার্কিন বন্দি মুক্তির বিনিময়ে ইরানের প্রাপ্য নগদ ৪০ কোটি ডলার হস্তান্তর করা হয়েছিল৷ সে সময়ে তাঁর প্রশাসন প্রবল সমালোচনার শিকার হয়েছিল৷ বিরোধী রিপাব্লিকান দল বর্তমান বোঝাপড়ারও সমালোচনা করে বলেছে, এর ফলে ইরানের প্রশাসনের উপর বাজেট সংক্রান্ত চাপ কমে যাবে৷ এমনকি উৎসাহিত হয়ে সে দেশ আরো মার্কিন নাগরিককে পণবন্দি করতে পারে বলেও এক সংসদ সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷

ইরান দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না বলে ইরানি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের আটক করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়৷ ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে মার্কিন নাগরিকদের ক্ষেত্রে কড়া নীতি নিয়ে আসছে ইরানের সরকার৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এএফপি, এপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.