জেদ্দার শান্তি সম্মেলেন মাঝেই অশান্ত রাশিয়া-ইউক্রেন

সপ্তাহান্তে জেদ্দায় ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে সম্মেলনের মাঝে রাশিয়া ও ইউক্রেন হামলা-পালটা হামলা চালিয়ে গেছে৷ ক্রাইমিয়া উপদ্বীপে সেতু ও সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন৷

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার লাগাতার হামলা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির প্রতিরক্ষার ক্ষমতা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ বিশেষ করে আমেরিকা ও জার্মানি থেকে পাওয়া এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ‘গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল’ দেখাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ দৈনিক ভিডিও বার্তায় তিনি মার্কিন প্যাট্রিয়ট সিস্টেম ও জার্মান আইরিস-টি সিস্টেমের কার্যকারিতার প্রশংসা করেন৷ তার মতে, এই দুই রক্ষাকবচের কল্যাণে শুধু গত সপ্তাহেই রাশিয়ার ৬৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৭৮টি ড্রোন হামলার বেশিরভাগ ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে৷ রাজধানী কিয়েভসহ দেশের একাধিক অঞ্চলে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর আকাশপথে রাশিয়া ইচ্ছাকৃত হামলা চালিয়ে আসছে বলে জেলেনস্কি অভিযোগ করেন৷ খারকিভ অঞ্চলে এক ব্লাড ট্রান্সফিউশন কেন্দ্রের উপর হামলাকে তিনি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেন৷

ইউক্রেনও রাশিয়া-অধিকৃত এলাকার উপর পালটা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী দুটি সেতুর উপর ইউক্রেন জোরালো হামলা চালিয়েছে৷ রাশিয়া-নিযুক্ত ক্রাইমিয়ার গভর্নর বলেন, চোনহার সেতুর উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘটেছে৷ এছাড়া ক্রাইমিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের রাশিয়া-অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে তিনটি সড়কপথের উপরেও হামলা চালানো হয়েছে৷

রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের উপর হামলা সম্পর্কে সে দেশ অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করছে না৷ রোববার মস্কোর উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা একটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে বলে রাশিয়া দাবি করছে৷ কিছু সময়ের জন্য শহরের একটি বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ শুধু চলতি সপ্তাহেই এমন তিনটি ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে৷

সৌদি আরবের উদ্যোগে ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে সপ্তাহান্তে আলোচনার মাঝেই যুদ্ধক্ষেত্রে এমন তৎপরতা চলেছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দপ্তরের কর্মকর্তা মিখাইলো পডোলইয়াক বলেন, ইউক্রেন যেভাবে ‘নিরপেক্ষ’ দেশগুলির এই সম্মেলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছে, তার জবাব হিসেবেই রাশিয়া আরো হামলা চালিয়েছে৷

উল্লেখ্য, শনিবার ও রোববার জেদ্দা শহরে জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চীন ও ভারতসহ প্রায় ৪০টি দেশ ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়েছে৷ মূলত বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন৷ রাশিয়া অবশ্য সম্মেলনে অংশ নেয়নি৷ অংশগ্রহণকারী দেশগুলি এই সংলাপ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেছে৷ কোনো স্পষ্ট ফলাফল বা ঘোষণাপত্র সম্ভব না হলেও ইউক্রেন এই উদ্যোগ সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংলাপের এক ফর্মুলা সম্পর্কে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাব সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয় নি৷ তবে এমন উদ্যোগের সঙ্গে জেলেনস্কির নিজস্ব শান্তি প্রস্তাবের মিল থাকায় ইউক্রেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷

রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী দেশ চীনও জেদ্দা সম্মেলনে অংশ নেওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে৷ গত জুন মাসে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ইউক্রেনে শান্তি সংক্রান্ত প্রথম সম্মেলনে সে দেশ যোগ দেয়নি৷ এমনকি জেদ্দার পর তৃতীয় সম্মেলন আয়োজনের পক্ষে চীন সমর্থন জানিয়েছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.