ববি শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও শিক্ষার্থী হেনস্থার অভিযোগ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের বিরুদ্ধে পরিবহন সংক্রান্ত হয়রানিমূলক আচরণ ও নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এর আগেও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, ইসলাম অবমাননা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ক্লাসে কটুক্তি, অকথ্য ভাষার ব্যবহার, বিদ্বেষবশত অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দেওয়াসহ বহু গুরুতর অভিযোগ আছে বিতর্কিত এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বুধবার (১ আগস্ট) অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য বরাবর বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগপত্র দিয়েছে। উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, কাজ চলমান।’

এর আগে রোববার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরিবহন পুলের ম্যানেজার বরাবর দুটি আলাদা লিখিত অভিযোগপত্র দেন বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক) শিক্ষার্থী মো. লুৎফর রহমান। গত বছর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ উঠে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় ও সঞ্জয় সরকারের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মো. লুৎফর রহমানের অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ‘আমি (লুৎফুর) দীর্ঘদিন ধরে গলা ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছি। গত (শনিবার) শ্বাসকষ্টসহ গলাব্যথা তীব্র হলে অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকারের শরণাপন্ন হই। তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে শেরেবাংলা হল থেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বরে পুনরায় ফোন দেই। তখন অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, সঞ্জয় সরকার ফোন না দেওয়া পর্যন্ত তিনি যেতে পারবেন না। এরপর সঞ্জয় সরকারকে পুনরায় ফোন দিলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিলে তিনি নানাভাবে আমাদের কটুক্তিমূলক কথা বলেন এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকে আসতে নিষেধ করেন। মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়ায় বাংলা বিভাগের অন্য শিক্ষক মোহাম্মাদ সাকিবুল হাসানকে ফোন দিলে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে বলে দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালক আমাকে নেওয়ার জন্য দপদপিয়া টোল পার হন। পথিমধ্যে চেয়ারম্যান উন্মেষ রায় ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে নিষেধ করেন।’

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘উন্মেষ রায় পরীক্ষায় নম্বর টেম্পারিং করে আমাকে নম্বর কম দেন। তার কোর্সে ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও নম্বর দেন না। তিনি ইচ্ছে করেই ব্যক্তিগত আক্রোশে নম্বর কম দেন।’ এর আগেও তাজিজুর রহমানসহ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিদ্বেষবশত নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উন্মেষের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী লুৎফর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মার্কশিট তুলে দেখি অন্য কোর্সে ৩.৭৫ বা ৩.৫০ অথচ তার কোর্সে ৩.২৫ এর ওপর উঠেই না। সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েও তার কোর্সে ভালো নম্বর উঠাতে পারি না। তার রুমে গেলেও আমাকে বের করে দেওয়া হয়। স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছে কেন, বুঝতে পারছি না।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘অনার্সে আমার সব কোর্সের রেজাল্ট ৩.৫০ উপরে কিন্তু শুধু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের কোর্সগুলোতে ৩.৫০ এর নিচে। অর্নাসে আমাদের মোট ৭টি কোর্স নিয়েছেন তিনি। আশা করেছিলাম এসব কোর্সে সর্বনিম্ন জিপিএ ৩.৫০ পাব। কিন্তু তার এসব কোর্সগুলো কেনো এমন নম্বর পেলাম তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলা ছোটগল্প- ১ (কোড-১০৭) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা উপন্যাস-২ (কোড-২০৩) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা প্রবন্ধ-১ (কোড-২০৭) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা কবিতা-৪ (কোড-৩০১) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা রম্য সাহিত্য (কোড-৩০৮) ৩.০০, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য (কোড- ৪০৪) ৩.২৫ এবং ভ্রমণ ও পত্র সাহিত্য (কোড -৪০৭) পেয়েছি ৩.০০।’

২০২২ সালের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন বরাবর ৩৯ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। ফেসবুকে তিনি ধর্মীয় উস্কানী দিচ্ছেন বলে ডকুমেন্টসহ অভিযোগ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ পত্রে বলা হয়, গত ২১-০৬-২২ তারিখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকার এবং সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় তাদের ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্টে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়কে কটাক্ষ করে কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানিমূলক স্টাটাস পোস্ট করে। তাদের এমন গর্হিত কাজের প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। যা আমাদের অসাম্প্রতিক চেতনার পরিপন্থী।’ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের অভিযোগ, গুরুতর এ অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেননি উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন। এই দুই কট্টর শিক্ষক ভিসির কাছের লোক বলে তারা নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যান। এসব অভিযোগের বিষয়ে ববির সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় বলেন, ‘নম্বর ট্যাম্পারিংয়ের বিষয়ে আমি জানি না, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। কেউ অভিযোগ দিতেই পারে। আর এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন দিয়েছে ওই শিক্ষার্থী, তবে এরকম কোনো কিছু ঘটে নাই। আর আমাদের সাশ্রয়ের বিষয় আছে তো। সাধারণত জরুরি বিষয় হলে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টা দেখি।’

 

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.