অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই এ ভিসানীতি: উজরা জেয়া

বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন ভিসানীতি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই হচ্ছে ভিসা পলিসি। সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রতিশ্রুতি আছে, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করতে এ ভিসানীতি।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।

ইহসানুল করিম বলেন, সাক্ষাতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়।

এসময় উজরা জেয়া জানান, কোনো দলের প্রতি তাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। তারা একটা নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান।

সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা তার অঙ্গীকার। সবসময় বলে আসছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা আগেও করেছি। ছাত্রজীবন থেকে তিনি এবং তার পরিবার সবসময় মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’, জনগণ তাদের প্রতিনিধি বাছাই করবে, জনগণের এ অধিকার আদায়ে তার দল সবসময় সংগ্রাম করেছে। আমরা দেখেছি অতীতে বিএনপি কীভাবে ভোট কারচুপি করেছে। আমরা সংগ্রাম করে সেটি পরিবর্তন করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, এটা আমরা চালু করেছি।

বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩-১৫ সালে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস করে, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ৫০০ জন নিহত হন।

বিভিন্ন সময় হামলার শিকার হওয়ার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে বার বার তার ওপর হামলা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে নেতাকর্মী, সমর্থকরা মানবপ্রাচীর তৈরি তার প্রাণ বাঁচিয়েছেন।

সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলেন উজরা জেয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানান মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালন ব্যয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে বলে জানান উজরা জেয়া। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দুটি এলাকায় বাংলাদেশ বর্তমানে ১ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচার, অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে, যেটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানান উজরা জেয়া। শ্রমিক ইস্যুতে আলোচনাকালে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এক সঙ্গে কাজ করবে এবং বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মালিকদের চাপ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়িয়েছেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.